স্টাফ রিপোর্টার: টানা ৩ দিন পরিবহন ধর্মঘট। বাস, সিএনজি, থ্রি-হুইলার বন্ধ। পথে পথে বাধা, পুলিশের চেকপোস্ট। হামলা-মামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেও পদ্মার পাড়ে বড় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এই সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা সরকার পতনে আন্দোলনের বার্তা দিয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজশাহী মাদরাসা ময়দানের গণসমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ পুলিশের বন্দুক পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আমরা ৯টি বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করেছি। মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে বিএনপি’র সমাবেশে স্রোতের মতো আসছেন। এতে সরকার দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ। এখন তাদের ঘুম হারিয়ে গেছে। ভয় পাচ্ছে। এই বুঝি তাদের ক্ষমতা গেলো! ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভয়ের শেষ নেই। কারণ তারা এই দেশে এমন কিছু কাজ করেছে যে নিজেদের (আওয়ামী লীগের) ওপরও কোনো আস্থা নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে এই বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন করেছে দলটি। এ নিয়ে ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করেছেন তারা। আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ।
নয়াপল্টনের গণসমাবেশ প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতঙ্কে ভুগছে। আমরা নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি, যেখানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছেন। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গি বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে। আর দোষ চাপায় বিএনপি’র ওপর। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক দল নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪-১৫ বছরে আওয়ামী লীগ লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। সব সেক্টরে দুর্নীতি করে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। নিজেরা সম্পদ লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সব নিজ দল ও বিত্তশালীদের উন্নয়ন হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে-বেনামে ঋণের নামে লুট করছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করছে।
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। যে দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে, সেই দেশের সরকার প্রতিদিন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা কোন দেশে বাস করছি, যে দেশে প্রধানমন্ত্রী খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্র একটাই- যেমন করেই হোক ক্ষমতায় বসে থাকা।
তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছে। অনেককেই যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে। সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায়। কিন্তু বিরোধী দল আরও নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে। আজকে ধানের শীষে রক্ত মিশেছে। এই রক্ত দূর করে ধানের শীষ পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন বিএনপি’র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন। আমরা আর কষ্ট করবো না। এই ভয়াবহ দানব সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক থাকবে না। ১৪ বছর ধরে আমরা নির্যাতিত। গুম, খুন হওয়া পরিবারের ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো তাদের বাবা ও স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেই সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে। এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারা কেয়ারটেকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মানুষ মেরেছে। পাঁচবার কেয়ারটেকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে, সমস্যা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আজকে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের সবকিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ডলারের দাম এখন আকাশচুম্বী। কারণ সবই তো কানাডা আর মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। ১১ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর বলে মেগা উন্নয়ন করেছে। অথচ কৃষক সার পায় না। ফসলের দাম পায় না। ঘরে ঘরে চাকরি নেই। দশ টাকায় চাল নেই। কারণ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। নিরীহ মানুষের ওপর কেন নির্যাতন করেন? খবরদার আর নিপীড়ন করবেন না। আপনারা হলেন জনগণের সেবক। যেখানে আপনাদের উচিত ছিল নেতাকর্মীদেরকে সহযোগিতা করা, অথচ সেখানে আপনারা পানি, বিদ্যুৎ ও খাবার বন্ধ করেছেন। আপনারা এত অমানুষ কেন? এভাবে সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। আপনারা বিধান মেনে চলুন। অন্যথায় দেশের মানুষ কিন্তু কোনো অন্যায় সহ্য করবে না।
রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় গেছে। বিদেশিরাও বলছে তারা ভোট চোর। আসলে তাদের কোনো লজ্জা নেই।
তিনি বলেন, গত ২ বছরে ১২ হাজার নতুন কোটিপতি বেড়েছে। অন্যদিকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ আরও গরিব হয়েছে। তাহলে সরকার কার উন্নয়ন করেছে? আজকে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ শান্তিতে নেই, যারা হারাম উপার্জন করে। যারা ঘুষ খায়, অবৈধ উপার্জন করে তারা কেবল সুখে আছে। এই সরকারকে বদলাতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, রাজশাহীর সমাবেশ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শেখ হাসিনার সরকারকে দেশের জনগণ আর চায় না। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আজকে জনগণ সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে। সরকার এখন আতঙ্কিত। ইনশাআল¬াহ ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরপর জনগণই আপনাদের বিরুদ্ধে খেলবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আজকের বাংলাদেশের জন্য নয়। আজকে একটি সমাবেশ করতে হলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং জনগণ তিন দিন আগেই এসে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। এটা কি সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ? আজকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। তবে মানুষের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করবো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমাদের সমাবেশের উত্তাল ঢেউ ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। ৯০ শতাংশের ঘরে আজ চাল নেই, তেল নেই, বাচ্চার খাবার দুধ নেই। সবকিছুর অগ্নিমূল্য।
মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বিচার বিভাগকে শুদ্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে বিচার বিভাগ দিয়ে সুষ্ঠু বিচার হবে না। ৩ ঘণ্টার সমাবেশ সফল করতে আপনারা ৪ দিন ধরে আছেন। কারণ আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আর সরকার হরতাল পালন করছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান মিঞা, আব্দুল মান্নান তালুকদার, হাবিবুর রহমান ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ লতিফ খান, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহীন শওকত খালেক ও ওবায়দুর রহমান চন্দন, রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলন, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রমুখ।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার পর পবিত্র কোরআন পাঠের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজশাহীর সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকালে সমাবেশের মাঠে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস নেতাকর্মীদের দেশাত্মবোধক, দলীয় সংগীতের সুরের মূর্ছনায় উদ্বেলিত হয়ে পড়ে পুরো মাঠ। অন্যদিকে গত তিন দিন ধরে ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা নিজেদের তাঁবু গুটিয়ে মিছিলে আর স্লোগানে সমাবেশের মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন। তাদের সঙ্গে রাজশাহী জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা নানান রঙের গেঞ্জি, টুপি আর হাতে পাকা ধানের শীষ নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। সমাবেশ মাঠের প্রবেশমুখে পুলিশের কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। মূল গেটের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে তারা বিএনপি’র আগত নেতাকর্মীদের তল্লাশির পাশাপাশি হাতে নিয়ে আসা বাঁশের লাঠি নিয়ে নেয়। এমনকি গেটের সামনে লাগানো বিএনপি নেতাকর্মীদের পোস্টারও খুলে ফেলে পুলিশ। সমাবেশের মাঠের পেছনেও ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা ছিলো এদিন। তবে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশের মাঠে প্রবেশ এবং মিছিল করেন।
পথে পথে বাধা, তল্লাশি ও হামলা: সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক মানুষ। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল। পুলিশের বাধা ও ব্যারিকেড ভেঙে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে রাজশাহীতে প্রবেশের মুখে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন বগুড়া যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। বগুড়া থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বেলাল বলেন, বিকাল ৩টায় বগুড়া থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। পথে পুলিশ বাধা দিলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে পার পেয়ে যাই। তবে মোহনপুর এলাকায় আসামাত্র সেখানকার আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে আমাদের গতিরোধ করে সরকারদলীয় লোকজন। আচমকাই আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদেরকে আহত করে। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
যেভাবে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা: এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১লা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। প্রথমদিন শুধুমাত্র বাস চলাচল বন্ধ হলেও পরবর্তীতে ধর্মঘটের আওতায় পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজশাহী। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে ধর্মঘট, বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন মাধ্যমে রাজশাহী পৌঁছান বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেল, নৌকায় তিন চাকার যান ও ট্রেনে করে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, কানসাট, আত্রাই, রাণীনগর, শেরপুর, সারিয়াকান্দি, কাহালু, নন্দীগ্রাম, শান্তাহার, গাবতলী থেকে বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেন লাখো জনতা। অনেকেই পরিবহন ধর্মঘটের আভাস পেয়ে কয়েকদিন আগেই রাজশাহীতে হোটেল ও সমাবেশস্থলের পাশে ঈদগাহ মাঠে তাঁবু করে আশ্রয় নেন। কেউ কেউ পদ্মা নদীর পাড়ে তাঁবু করে রাতযাপন করেন। এ ছাড়া অনেকেই নগরীতে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজন, মহানগর, জেলা ও ওয়ার্ড বিএনপি’র কার্যালয়ে রাতযাপন করেছেন। সমাবেশের আগের রাতে ঈদগাহ মাঠ এলাকায় দেখা যায়, কনকনে শীত উপেক্ষা করে তাঁবুর মধ্যে শুয়ে আছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। অনেকেই তাঁবুর মধ্যে ও বাইরে আড্ডা-গল্প করছেন। কেউ কেউ সড়ক ও অলিগলিতে মিছিল করছেন। ছবি ও ভিডিও করছেন। নেতাকর্মীদের সাহস জোগাতে ‘মিনি সমাবেশ’ করছেন। সরকারের নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করছেন।
এদিকে শনিবার সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে বাড়ি ফিরতে পরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য দুপুর ৩টা থেকে নগরীর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় সহ প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।