স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করবো। সেজন্য আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছি একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিনও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আইএইএ ও রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘রূপকল্প-২০২১’-এর সঙ্গে সংগতি রেখে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১০’ প্রণয়ন করি। আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিই। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। তাছাড়া আইএইএ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এজন্য আমি রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, আইএইএ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
এ সময় তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি সই এবং বিশেষ আতিথেয়তার স্মৃতিচারণা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৭ সালে আইএইএ-এর সাবেক মহাপরিচালক ইউকিও আমানোর আমন্ত্রণে ভিয়েনা সফরের সময় আইএইএ-এর সদর দপ্তরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করি। এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিংয়ের আহ্বান জানাই। সেই থেকে আইএইএ আমাদের এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২ সালে এ কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২-এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সংযুক্ত হলো। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একই রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে, সেজন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতেও পাঠিয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। এইমাত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে শুনলাম ২০২৬ সালে দ্বিতীয় এবং ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিট চালু হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যে কোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন ও নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এসডিজি পুরস্কার, ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার, ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কার অর্জন করেছি। তাছাড়া জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক-সংক্রান্ত স্বীকৃতিসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছি। আমরা জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষাব্যবস্থা, সর্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ-স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কৃষি গবেষণায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল নিয়ে এখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক তরুণ প্রজন্মই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।