স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভ‚ত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কাল সোমবার এটি ঘূর্ণিঝড় অশনিতে রূপ নিতে পারে। আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভ‚ত হয়ে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভ‚ত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি, ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলা হয়েছে অন্য এক পূর্বাভাসে। বর্তমান অবস্থায় রোববার সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় পশ্চিম/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০-১৫ কি.মি.। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিলো ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার দিনগত রাতে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আর এটি পরবর্তীতে শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার ঘূর্ণিঝড় অশনিতে রূপ নিতে পারে। অশনি নামটি শ্রীলংকার দেয়া। বর্তমানে লঘুচাপের যে গতিপথ সে অনুযায়ী এটি সেন্টমার্টিনের পাশ দিয়ে মিনায়নমার উপক‚লে সরাসরি আঘাত হানতে পারে।
ভারতীয় খবরে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গভীর নিম্নচাপ ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। আজ রোববারের মধ্যে তা সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হিসেবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে যাবে। কাল সোমবার সকালের মধ্যে তা ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়বে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। তারপর উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে তা উত্তর মায়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ উপকূলে পৌঁছুবে।
শনিবার বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণপ‚র্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভ‚ত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এই অবস্থায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে সাবধান থাকার নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে হবে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
রোববার থেকে আন্দামানে দমকা হাওয়া শুরু হবে। সোমবার ঝড়ের গতিবেগ ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটারে পৌঁছুবে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ৮০ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অফিস থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী সাধারণ মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কাঁচাবাড়িতে যারা থাকেন, তাদের সরকারের তরফ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জলোচ্ছ¡াসের জেরে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এর আগে গত বুধবার বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে সেটি নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর সংলগ্ন পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়েছে। একবার এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তার নাম হবে ‘আসানি’। আর এর নামকরণ করেছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা।