স্টাফ রিপোর্টার: বাজারে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না, যার দাম স্থিতিশীল বা কমছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এর মধ্যে আমদানি করা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, মসলা পণ্য, মাছ-মাংস, ডিম, শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ, চিনি এমনকি লবণের দামও বেড়েছে। পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য সব ধরনের পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন-সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে এই তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে পণ্য কিনতে ভোক্তার যেন নাভিশ্বাস বাড়ছে। এতে বেশি ভোগান্তিতে আছেন নিম্ন আয় ও খেটে খাওয়া মানুষ।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জরিপ বলছে-মঙ্গলবার গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চাল ২ টাকা, আটা-ময়দা ৮-১০, ভোজ্যতেল ৩০-৩৫, মসুর ডাল ১০, আলু ৫, পেঁয়াজ ১৫-২০, রসুন ৬০, আদা ৪০, হলুদ ২০, শুকনা মরিচ ২০, মাছ-মাংস ১০-২০, দুধ ৩০, চিনি ৪, প্রতি হালি ডিম ৮ টাকাসহ মোট ১৫টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে; যা ভোক্তার প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। আর এসব পণ্যের দাম মাসের ব্যবধানে এক শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বেড়েছে।
কনজ্যুমার ফোরাম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বাড়ায় দেশের বাজারেও প্রভাব পড়বে, এটাই স্বভাবিক। তবে যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হয়, তার দাম কেন বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে? আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম এখন বাড়লে এই দামের এলসি করা পণ্য দেশে আসতে আরও তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। কিন্তু বিক্রেতাদের আজ বাড়লে আজই বাড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। যার কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি তদারকি সংস্থা এ বিষয়টি সামনে রেখে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনেনি। ফলে বিক্রেতারা কারসাজি করতে সাহস পাচ্ছে। তাই বাজার তদারকি আরও জোরদার করতে হবে। আইন যা আছে, তা প্রয়োগ করতে হবে। শুধু জরিমানা করে ছেড়ে নয়, কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, পণ্য নিয়ে কারসাজি রোধে বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এবার অসাধু পন্থায় পণ্যের দাম বাড়ালে জরিমানার সঙ্গে জেলে দেয়া হবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ৪৬ টাকা। প্রতি কেজি বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা, যা এক মাস আগে ছিলো ৫৪-৫৫ টাকা। এই বোরো মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কথা না। কিন্তু মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বড় কিছু কোম্পানি চাল ব্যবসায় নামায় তারা ধান মজুত করছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে।
মঙ্গলবার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা, যা এক মাস আগে ১৭০ টাকা ছিলো। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি খোলা আটা ৬ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা ময়দা ৮ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট দানার মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। মাসের ব্যবধানে আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা, যা মাসের ব্যবধানে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন ৬০ টাকা বেড়ে ১২০ এবং আমদানি করা রসুনে ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ ২০ টাকা বেড়ে ২২০, আমদানি হলুদ ২০ টাকা বেড়ে ১৬০-১৮০, আমদনি আদা ৪০ টাকা বেড়ে ১৪০, চিনি ৫ টাকা বেড়ে ৮৫, গুঁড়া দুধ ৩০ টাকা বেড়ে ৭০০ এবং লবণ ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। সঙ্গে পরিবহণ খরচের মধ্যে জাহাজ ভাড়া বাড়ায় আমদানি করা পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে।
নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে সাবান, টুথপেস্ট, বিস্কুট, চানাচুর, পাওরুটি, ডিটারজেন্ট, নারিকেল তেল প্রভৃতির দামও বেড়েছে। ৩০ টাকা লাইফবয় সাবান এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮৫ টাকার এক কেজি হুইল পাউডারের দাম এখন ১০০ টাকা। ১০০ টাকার পেপসোডেন্ট টুথটেস্ট এখন ১২০ টাকা। ছোট সাইজের অ্যানার্জি বিস্কুটের দাম ৩০ টাকা, যা আগে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি প্যাকেট চানাচুর বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকা, যা আগে ৩৫ টাকা ছিলো। ৪০০ এমএলের অ্যারোসল ৪৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৪০০ টাকা ছিলো। পাশাপাশি ওষুধ কিনতেও ভোগান্তি বেড়েছে। আগে এক পাতা নাপা টেবলেট ১০ টাকা থাকলেও এখন ২০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। গ্যাসট্রিকের ওষুধপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। একটি অ্যান্ট্রাজল ড্রপ ১০ টাকা থাকলেও এখন ২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।