মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎস্বর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদশে আলোচনাসভা ও কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহীদ পুলিশ সদস্যদের সম্মানে শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এরপর পুলিশ লাইনে ড্রিল শেড মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাসভায় পুলিশ কারও প্রতিপক্ষ নয় বলে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের নিরাপত্তায় সবসময় তৎপর রয়েছে। তাহলে কেনো সবসময় পুলিশকে প্রতিপক্ষ বানানো হয়? পুলিশ কারও প্রতিপক্ষ নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের যেমন অগ্রণী ভূমিকা ছিলো, তেমনই এই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য এবং দেশের উন্নয়নের ধারাকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বক্তরা আরও বলেন, পুলিশের চোখের পাতা কখনও এক হয় না। পুলিশ সদস্যরা সারারাত জেগে থাকে দেশের সু-নাগরিকদের জন্য। করোনা সময়ে পুলিশ নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে সামনে থেকে কাজ করেছে। ২০২০ সালে দেশে বিভিন্ন পদের ২০৮ জন পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। পুলিশের সদস্যরা নিজের জীবনকে বাজি রেখে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ দাফন করেছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। বর্তমান মহামারী করোনাকালে বিশ্ব যখন দিশেহারা তখন মানুষের কাছে আলোর দিশারী, পথ প্রদর্শক, পরিচালক ও ত্রাতা হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গায় কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে পুলিশ লাইন্স চত্বরে নির্মিত অস্থায়ী পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। পরে সদর সার্কেল, দামুড়হুদা সার্কেল, সিআইডি, ডিএসবিসহ সকল থানার অফিসার ইনচার্জবৃন্দ নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ গভীর শ্রদ্ধায় স্মৃতিস্তম্ভে¢ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে পুলিশ লাইন্স ড্রিল সেডে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক। অনুষ্ঠানে ২০২০ সাল এবং পূর্বে চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ও পুলিশ সদস্য যারা জেলার বাইরে বিভিন্ন ইউনিটে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের ৭ পরিবারবর্গের ২৬ জন সদস্যকে স্বীকৃতি স্মারক ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়। পুলিশ সুপার মহোদয় মঞ্চ থেকে দর্শক সারিতে এসে নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যেকের পরিবারবর্গের হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র, নগদ অর্থ এবং শাড়ী, থ্রিপিচ, শার্ট-প্যান্ট, বাচ্চাদের পোশাক, স্কুল ব্যাগ তুলে দেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. আবু রাসেল প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে পুলিশে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী দুই পুলিশ সদস্য পেলেন আইজিপি কর্তৃক নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী। এছাড়াও জেলার আরও ১৮ জন পেলেন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার। গতকাল সোমবার পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে তাদেরকে এ উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুর পুলিশ লাইন ড্রিল শেড মিলনায়তনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামিরুল ইসলাম মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের হাতে নগদ অর্থসহ অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেন। পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি শেখপাড়া গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে নায়েক আব্দুস সালামের পরিবারের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার এবং গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে কনস্টেবল ইব্রাহিম খলিলের পরিবারের হাতে সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। নায়েক আব্দুস সালাম ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় এবং কনস্টেবল ইব্রাহিম খলিল কুষ্টিয়াতে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এফএম ফয়সাল, সদর থানার ওসি শাহ দারা, গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান, মুজিবনগর থানার ওসি আবুল হাশেম, ডিবির ওসি জুলফিকার আলীসহ পুলিশের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ ২০২১ উপলক্ষে ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গদের সাথে নিয়ে নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিবিআই পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) শাহরিয়ার আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) আনোয়ার সাঈদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (কোটচাঁদপুর সার্কেল) মোহাইমিনুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (শৈলকুপা সার্কেল) আরিফুল ইসলাম প্রমুখ। এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় সকলে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কথা শোনেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন, সব সময় তাদের পাশে থাকবেন মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন এবং নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। আলোচনা শেষে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।