স্টাফ রিপোর্টার: সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারের সকল প্রকার উন্নয়ন তরান্বিত করার বিষয়ে সর্বাত্মক আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ তাগিদ দিয়ে বলেছেন, বই পুস্তক উপহার দেয়ার রেওয়াজ জোরদার করতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে এটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও শিশু একাডেমির প্রকাশনায় বিপুল সংখ্য বই রয়েছে। যেসব বই পড়া শিশু কিশোরসহ সব বয়ষীদেরই পড়ার উপযোগী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও শিশু একাডেমি সরাসরি স্বল্পমূল্যে ভালো ভালো বই বিক্রি করে। এখান থেকে বই কিনে উপহার-পুরস্কার দেয়ার বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কের রেল লেবেল ক্রসিঙের ওভার পাস সম্পর্কে জানাতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মঞ্জুরুল করিম বলেন, ইতোমধ্যেই দরপত্র আহ্বানসহ প্রাথমিক যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করা যায় অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে রেললেবেল ক্রসিঙ ওভার পাস নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে। একই স্থানের আন্ডারপাসটি সহযগোম্য করতে হলে তার দুপাশে থাকা অবৈধ স্থাপনাসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করতে হবে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে জনদুর্ভোগ বহুলাংশে হ্রাস পাবে। সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা, জেলার সার্বিক কৃষি উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এবার জেলায় ৪৯ হাজার হেক্টোর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। সরিষার আবাদও বেড়েছে। মাঠে বিদু্যুত চালিত সেচযন্ত্র বিদ্যুতের কারনে বন্ধ না থাকে সেদিকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। পতিত জমিতে আবাদের জন্য সংশ্লিষ্টদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু পতিত জমি আবাদের আওতায় নেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নুর বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশে পাশের জমিও আবাদের আওতায় নেয়া যেতে পারে। ওজোপডিকোর চুয়াডাঙ্গাস্থ নব নিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ সভায় পরিচিত হয়ে জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। জেলা প্রশাসক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকার কৃষিখাতে কৃষকদের জন্য যে প্রণোদনা দিচ্ছে তা যেনো ঘুরে ফিরে একই কৃষক না পান তা নিশ্চিত করে মাঠ পর্যায়ে জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত পাওনাদার কৃষকদের হাতেই কৃষি প্রণোদনার অর্থ তুলে দিতে হবে। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান পুনঃপুনঃ তাগিদ দিয়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গার ব্রান্ড ব্লাক বেঙ্গল গোট। দেশি প্রজাতির কালো ছাগল। এ ছাগল পালনে সকলকে উদ্বুদ্ধ করে কালো খাসির মাংশ যাতে প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে দেশ বিদেশে রপ্তানি করা যায় সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণকে আন্তরিক হওয়া দরকার। চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়ও ঐতিহ্যবাহী। এটাও যাতে যথযথভাবে রপ্তানি করা যায় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। চুয়াডাঙ্গা পৌর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিয়ে যেসব মহল্লয় রাস্তা না রেখে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেছে সেদিকে নজর দিয়ে যাতে ফাইর সার্ভিসের গাড়ি অ্য্যাম্বুলেন্স যেতে পারে সেদিকে নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন করে যেসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে তা পৌর আইন মেনে হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদাসিনতা মানে ভবিষ্যত প্রজন্মের ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ও ডিডিসিসি সচিব নাজমুল হামিদ রেজা উপস্থাপিত উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম দোলন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা, চুয়াডাঙ্গা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক একেএম শাহীন কবির, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক মাকসুরা জান্নাত, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিনসহ উপস্থিত অনকেই বক্তব্য রাখেন। উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভার আগে একই স্থানে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ২৫ দশা নির্দেশনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। এ সেমিনারে জেলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধন, এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা জোরদার করা, নিজেরা বিদ্যত ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হাওয়াসহ ২৫ দফা নিয়ে বিষদে আলোচনা করা হয়।