নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু ২০ ডিসেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছেন রাষ্ট্রপতি। ২০ ডিসেম্বর সোমবার থেকে শুরু হবে বলে বঙ্গভবনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। দু-একদিনের মধ্যেই দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হতে পারে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন প্রণয়ন ছাড়াই এবারও আগের পথেই নতুন নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইসি গঠনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মতো মো. আব্দুল হামিদও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল এখন ৩৯টি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এক মাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। তবে এবারও ৩১টি দলের সঙ্গেই সংলাপ হবে। সেক্ষেত্রে একাধিক দল নিয়ে একই দিনে সংলাপ করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানান, একটি ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী ও কার্যকর’ একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রথম আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংলাপ শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য একদিনে একাধিক দলের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে এবং এটা নিয়ে কাজ করছে বঙ্গভবন। সংলাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছি। সরকারের একাধিক মন্ত্রীও আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। তারপরও মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি অতীতের মতো এবারও ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন তাতে আপত্তি নেই। আমন্ত্রণ জানালে তাতে আমরা অংশ নেব এবং আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে মঙ্গলবার আমাদের জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনো পাওয়া যায়নি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির সংলাপের আমন্ত্রণ পাননি। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমার জানামতে এখনও রাষ্ট্রপতির চিঠি পাইনি। সংলাপের আমন্ত্রণ পেলে আমরা অবশ্যই তাতে অংশ নেব এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরব।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা এখনও কোনো আমন্ত্রণ পাননি। তবে বিএনপির দুজন নীতিনির্ধারক জানান, রাষ্ট্রপতির সংলাপের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে বেশির ভাগ নেতাই রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাওয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক। তারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ লোকদেখানো ও সংবিধানবিরোধী। এভাবে প্রতিবার সংবিধানবিরোধী সংলাপে অংশ নেয়ার কোনো মানে হয় না। তাছাড়া সবার মতামত নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই হবে নতুন ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত সংলাপে অংশ না নিলেও দলীয় অবস্থান তুলে ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠাতে পারে বিএনপি। চিঠিতে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানোর অনুরোধ করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কেউ রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ বা চিঠি পাননি। জানতে চাইলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়ুয়া বলেন, আমরা এখনো চিঠি বা ফোন পাইনি। আমন্ত্রণ পেলে সংলাপে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা, আমরা অব্যশই অংশ নেব। আমন্ত্রণ পেলে সংলাপে অংশ নেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদও।
সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। তার আগেই নতুন ইসি নিয়োগে সংলাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গভবন। সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি গঠন করার পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে তা গঠনের কথা থাকলেও সেই আইন এখনও প্রণীত হয়নি। এ নিয়ে দেশের সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আইন প্রণয়নের প্রতি জোর দিয়ে আসছে। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি খসড়া আইন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে তুলে দেন। এর আগে এটিএম শামসুল হুদা কমিশনও ইসি গঠনে একটি আইনের প্রস্তাব করে যান। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২৮ নভেম্বর সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের আগামী দুটি অধিবেশনের মধ্যে তিনি ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন সংসদে তুলতে পারবেন। তবে আগের মতোই এবারের ইসিও সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি করবেন বলে জানান তিনি।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

 

Comments (0)
Add Comment