স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার ষষ্ঠ দিনেও ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও নারী নির্যাতনবিরোধী রম্য গান এবং গণসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এসব কর্মসূচি থেকে ধর্ষণ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। ধর্ষণ রুখতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপরও জোর দেন আন্দোলনকারীরা।
বক্তারা বলেন, পরিস্থিতির এতো অবনতির পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃতিই দায়ী। এখনও বিচার নিশ্চিত হয়নি আলোচিত সোহাগী জাহান তনু হত্যার, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চার সন্তানের জননী গণধর্ষণের, বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাসহ অনেক ধর্ষণ মামলার। তাই এই সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে সবার আগে দরকার সম্মিলিত সদিচ্ছা। মানববন্ধনে বক্তারা রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনকে ধর্ষকদের ব্যাপারে কোনো ধরনের সহনশীলতা দেখাতে পারবে না বলে দাবি করেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ধর্ষক ও নারী নির্যাতনকারীদের ফাঁসির দাবিতে দর্শনায় র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনব্যাপী পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ১০টার দিকে দর্শনা পুরাতন বাজার মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা করেছে প্রতিবাদ সভা। বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ওয়ার্কাস পার্টি নেতা সৈয়দ মজনুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তমছের আলী, মহাসীন আলী, আব্দুল হান্নান, বদরুল আলম ফিট্টু, মুনছুর আলী, রেজাউল করিম, দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন নেতা আতিয়ার রহমান হাবু, আ.লীগ নেতা শফিকুল আলম, সোলায়মান কবির, অনির্বাণ থিয়েটারের টিটো খান, মাহবুবুর রহমান মুকুল, সাজ্জাদ হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা তোফাজ্জেল হোসেন তপু, নাহিদ পারভেজ প্রমুখ। উপস্থাপনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম সবুর। বিকেলে দর্শনা মেমনগর মৌচাক সমাজ উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বুলবুল ইসলাম, ফিল্ড অফিসার জিল্লুর রহমান রিপন, হিসাবরক্ষক মগবুল হোসেন প্রমুখ।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্ষণ-নিপীড়ন মামলার সকল আসামি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিচার ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ‘মৃত্যুদ-’ নিশ্চিত এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে গাংনী বাসস্ট্যান্ডে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে গাংনী পৌর ছাত্রলীগ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনার পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা যা আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ হয়েছিলো। সে ঘটনাগুলোর কোনটির সুষ্ঠু বিচার তারা করেননি। তাদের সেই নির্যাতন একাত্তরে পাক হানাদারদের নির্যাতনকেও হার মানিয়েছিলো। গাংনী পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান হাবিবের সভাপতিত্বে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আতিয়ার রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন। বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট নেতৃবৃন্দ। বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশের আগে ছাত্রলীগের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হাসপাতাল বাজার থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ-খুন, দুর্নীতি, লুটপাটসহ দখলবাজির প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় জাতীয় যুবজোট মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। শনিবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় শহরের এনএস রোডস্থ বকচত্বরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসানের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি পাশবিক সহিংসতা এবং ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি হাজি গোলাম মহসিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, কারশেদ আলম, সাবেক কাউন্সিলর আকতার হোসেন, যুবনেতা মহব্বত আলী, আব্দুল আলীম, নাজমুল হাসান, সিদ্দিকুর রহমান বিদ্যুৎ, জাসদ নেতা আবু তৈয়ব, নারী নেত্রী ডালিয়া পারভীন ও ছাত্রনেতা আসিফ ইকবাল প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবনেতা সাইফুজ্জামান রুবেল।
বক্তারা দেশব্যাপী নারী ও শিশু ধর্ষণসহ হত্যাকান্ডের ঘটনা মহামারি ব্যাধির মতো সংক্রমিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটা ঘটনার পরই এর বিচার ও শাস্তির দাবিতে রাজপথে দাঁড়ানো এখন স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। এর প্রধান কারণ এ জাতীয় নিষ্ঠুর নির্মম ঘটনার সুষ্ঠু বিচারহীনতা। সেই সাথে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।