দৌলাতপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা সরকারি নিয়ম অমান্য করে নিজের এবং পরিবারের অন্যদের নামে করিয়েছেন ভিজিডি ও ওএমএস এর কার্ড করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারমেনের যোগযাশসে তারা এমন অনিয়ম করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য শারমিন সুলতানা ২০১৯ সালের ১১ মার্চ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া মাসিক ৩০ কেজি খাদ্যশস্যের (চাল) ভিজিডি কার্ড নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজ নামে করে নিয়েছেন। তার কার্ড নম্বর-০৬। কোন জনপ্রতিনিধির নামে ভিজিডি কার্ড দেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজশে এভাবে কার্ড দিয়ে চাল উত্তোলন করে আসছেন বলে জানা গেছে।শারমিন সুলতানার প্রতিবেশী মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীর চর এলাকার পঞ্চাশোর্ধ জামাল সরদার অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে তার নামে খাদ্য অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যের (ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরে চালের কার্ড ইস্যু করা হলেও সেই কার্ড চার বছরেও হাতে পাননি তিনি। এমনকী এ সম্পর্কে তাকে কিছু জানানোও হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, চার বছর ধরে শারমিন সুলতানা নিজের কাছে রেখে ওই কার্ড ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করে আসছেন।জামাল সরদার বলেন, চার বছর আগে ওএমএস’র কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ওই ইউপি সদস্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নিয়েছিলেন। তারপর জানতে চাইলে তিনি বলতেন আমার কার্ড হয়নি। তিনি জানান, কয়েকদিন আগে এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা খাদ্য সহায়তা দিতে এলে ভয়ে শারমিন সুলতানা তার বাড়িতে গিয়ে কার্ডটি পৌঁছে দেন। জামাল সরদার বলেন, চার বছর ধরে ভুয়া টিপসই দিয়ে তিনি আমার কার্ড দিয়ে চাল তুলে নিয়েছেন। আমি ওই কার্ড নিতে চাইনি, তবুও শারমিন জোর করে বাড়িতে কার্ড রেখে যান। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জিয়ারুল ইসলামের স্ত্রী মানছুরা খাতুনের অভিযোগ করেন, তার নামে ২০১৯ সালে ভিজিডি কার্ড হলেও তিনি তা হাতে পাননি। তার অভিযোগ, এক বছর ধরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল উঠানো হয়েছে তার নামের কার্ড ব্যবহার করে। তার ভিজিডি কার্ডের নম্বর-০৪।
মানছুরা খাতুন জানান, ২০১৯ সালে নারী মেম্বার শারমিন সুলতানা তাকে ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার কথা বলে তার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নেন। এরপর কার্ডের জন্য বহুবার ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও কার্ড হয়নি বলে জানিয়ে দেন চেয়ারম্যান শাহ আলমগীরসহ পরিষদের অন্য সবাই। মানছুরা আরও জানান, তার ওই কার্ডে গত ১২ মাস ধরে টিপসই দিয়ে ভিজিডির চাল তোলা হয়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে এক বছর পর মানছুরা খাতুনের নামে ইস্যুকৃত কার্ডটি তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য শারমিন সুলতানা বলেন, আমার নামে মহিলা অধিদপ্তরের ভিজিডি কার্ড রয়েছে। আমি নিয়মিত চাল পাই। আমি অসহায় এবং বিধবা নারী, আমার উপরে চেয়ারম্যানের নেক নজর আছে। তাই তিনি কার্ড করে দিয়েছেন।
এদিকে, ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধেও ভিজিডির কার্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজের স্ত্রী, মা, বোনসহ নিকটাত্মীয়দের নামে ভিজিডি ও ওএমএস এর কার্ড করেছেন বলে জানা গেছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগ স্বীকার করে নাসির উদ্দীন বলেন, এসব কার্ড যখন আসে তখন চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সবার মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, এখানে নিয়ম অনিয়ম যা কিছুই হয়েছে সবই ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসেই হয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সকল সদস্যই নিজ নামে বা পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ওএমএস ও ভিজিডি কার্ড ইস্যু করে সরকারি চাল নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।এ ব্যাপারে মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর বলেন, ইউপি সদস্যের নামে ভিজিডি কার্ড করা যাবে কিনা সেটা আমার জানা ছিল না। অনেক মেম্বারই ওই সময় না বুঝে এমনটি করেছেন। তাছাড়া নিয়ম না থাকলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব কার্ড অনুমোদন দিলেন কিভাবে?
দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারী নিজ নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার কোনো নিয়ম নেই। যতই অসচ্ছল হোক এটি আইনসম্মত নয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের নির্দেশনা দেয়া ছিল, যেন এ ধরনের অনিয়ম না করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, অনিয়মগুলো তার জানা ছিল না। বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।