স্টাফ রিপোর্টার: তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান কানাডায় পাড়ি জমাতে পারেননি। সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর দুবাইয়ে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে রোববার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরিটাসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর’ মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে দেশের কয়েকটি জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলার আবেদন করা হয়েছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ, অশালীন ও অবমাননাকর বক্তব্যের জের ধরে গত মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন ডা. মুরাদ হাসান। এরপর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কানাডার উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তবে করোনা সংক্রমণের মধ্যে কানাডার নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি সে দেশে ঢুকতে পারেননি বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানেয়েছে। কানাডাভিত্তিক একাধিক অনলাইনের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হয়, টরেন্টো বিমানবন্দরে পৌঁছুনোর পর ডা. মুরাদ হাসানকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিকদের অভিযোগের কারণে পদ হারানো ওই প্রতিমন্ত্রী ভিসা থাকার পরও উত্তর আমেরিকার দেশটিতে ঢোকার সুযোগ পাননি। পরে রোববার বিকেলে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে-৫৮৬ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। সাংবাদিকদের এড়াতে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন মুরাদ হাসান। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এদিকে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সদ্য তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের সেরেস্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে ‘অশ্রাব্য’ মন্তব্য করায় মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী। একই আবেদনে আসামি হিসেবে মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের নামও রয়েছে। রোববার এ মামলার আবেদন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার। তিনি বলেন, ডা. মুরাদ হাসান ও মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ-প্রচারের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও মানহানিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারায় অপরাধ করেছেন। সেজন্য মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এরপর ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। রাত ৯টার দিকে ডা. মুরাদ হাসান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে এমিরেটসের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইটটি ছেড়ে যায় রাত ১টার দিকে। দুবাই হয়ে কানাডার পথে রওনা দেন তিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে মুরাদ কূটনৈতিক পাসপোর্টের অধিকারী।এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছুলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। কানাডায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টায় করছিলেন ডা. মুরাদ। কিন্তু সেই চেষ্টায়ও ব্যর্থ তিনি। দুবাইয়ের ভিসা না পেয়ে শেষমেশ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মুরাদ। অবশেষে রোববার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছুন তিনি।