স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করেছে। নষ্ট করে দিয়েছে সব স্বপ্ন। যেদিকে তাকাবেন, খালি চুরি আর চুরি। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের বিদায় দেখতে চায়। সময় থাকতে কেটে পড়ুন।’ শনিবার বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দেশে আর ২০১৪ সালের বিনা ভোট ও ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোটের মতো নির্বাচন হবে না। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এর আগে বেলা ১১টায় শুরু হয় কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশে বৃহস্পতিবার থেকে মানুষের ঢল নামে। শনিবার সমাবেশস্থল কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র টাউন হল মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। সেই সঙ্গে নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সমাবেশ শুরুর আগে টাউন হল মাঠে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও অনুসারী নেতাদের ছবি-সংবলিত রং-বেরঙের টি-শার্ট, গেঞ্জি, টুপি পরে স্লোগান দেয়। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সরকার এই সমাবেশ নস্যাৎ করতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারসহ হয়রানি করছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করে আসছি। ওই সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন, অথচ নিজেরা আগুন দিয়ে আমাদের ওপর দোষ দিয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। আগের মতো এখনো রাজশাহীতে ১১ দিনে ১০৪টি গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ আজ ন্যায়বিচার পায় না। আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাদের ওপর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটা দানবীয় সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। এই সরকারের কারণে মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তিনি আরও বলেন, বাংলার মানুষ গান গাইতে শিখেছে ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।’ এই সরকার রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। এখন বাংলার মানুষ তাদের বিদায় ঘণ্টা দেখতে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের জামানতও থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভ নাকি তিনি চিবিয়ে খান নাই, আমরা বলি-‘রিজার্ভ তিনি গিলে খেয়ে ফেলেছেন।’ আগামী তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করার মতো টাকা নেই। দেশে ডলার সংকট। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, তারা মানুষকে হত্যা ও গুম করছে। সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, কুমিল্লার লাকসামের সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুনের পরিবার আজও জানে না নিখোঁজ স্বজনদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। বাঞ্ছারামপুরের নয়নকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। তার স্ত্রী ও স্বজনরা এখন আহাজারি করছে। সারাদেশের বিভাগীয় সমাবেশের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ আজ জেগে উঠেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মানুষ আজ গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছে। জনগণকে জেগে উঠতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিনা ভোটের এই সরকার গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লাকসামের দুজনসহ আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। মধ্যবিত্ত গরিব হচ্ছে, দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে এই সরকার ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দিতে বাধ্য করেছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা ব্যাখ্যা দিয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ নয়, এটা হাইব্রিড দেশ। ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কুমিল্লা নামে বিভাগ না হলে জনগণ মেনে নেবে না। সরকার কুমিল্লাকে পছন্দ করে না। এখন যে নামেই বিভাগ হোক না কেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর এই সরকার পতনের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আপনারা সেই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলার জনগণ এই সরকারের অন্যায় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আজ কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি সমাবেশের মাধ্যমে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এই সরকার নৈশ ভোটের সরকার, এই দৈত্যকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের মানুষের উপার্জন না বাড়লেও প্রতিদিন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। প্রতিবাদ করলে সরকার গুলি করে মানুষ মারে। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া কোনো অপরাধ করেনি। সরকার তাদের ভয় পায় বলে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে তাদের সাজা দিয়েছে, আমরা এই রায় মানি না। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত নয়নের বাবা রহমত উল্ল্যাহ, লাকসাম থেকে গুম হওয়া সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান ইসলাম ও হুমায়ুনের ছেলে শাহরিয়া কবির রতন। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী, রুমিন ফারহানা এমপি, অধ্যাপক ডক্টর শাহেদা রফিক, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন, দলের শিল্প-বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজি জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু ও মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান বিপ্লব। এদিকে, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এক গ্রুপের নেতা মনিরুল হক সাক্কু সমাবেশ মঞ্চে আসন না পেলেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠের পূর্ব পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মুক্তমঞ্চ এলাকায় অবস্থান নেন। দলের আরেক বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার সম্মেলনস্থলে মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেন।