দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি : চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বজ্রপাতে ৩ কৃষক নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় সোমবার বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের পৃথকস্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। একই সাথে আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হয়। এদিকে আজ বুধবারও বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বলেছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় সোমবার ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত আবহাওয়া কার্যালয়ের দস্তাবেজে তোলা হয়েছে। দেশের সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী বিভাগের বদলগাছীতে ১৩৮ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো বরিশালে ৩৩ দশমিক ৮ এবং সর্বনিম্ন তাড়াশে ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৪। ফলে ভ্যাপসা গরম খুব একটা কমেনি। সোমবার ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নিকলি, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, সন্দীপ, সীতাকু-ু, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মাইজদী কোর্ট, ফেনী, হাতিয়া, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, ঈশ^রর্দী, তাড়াশ, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, তেতুরিয়া, ডিমলা, রাজারহাট, মংলা, কুমারখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, খেপুপাড়া, ভোলায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ বিহার পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংম উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেরশ ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসগারে দুর্বল থেকে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোতাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ৪৮ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। ৫ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের প্রাগপুর গ্রামের শামসুদ্দিন ম-লের ছেলে জেহের আলী (৪৮) বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তিনি বেগুনক্ষেতে বিষ দিতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হন। কেউ এ ঘটনা জানতে পারেনি। পরে দুপুরে কৃষক জেহের আলীর জন্য ভাত নিয়ে গিয়ে পরিবারের লোকজন দেখতে পায় তিনি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। বজ্রপাতে নিহত কৃষকের লাশ গতকাল বাদ আছর গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে আমাদের আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টির সময় ভোগাইলবগাদির মাঠে বজ্রপাত হয়। এতে ভোগাইল বগাদী মাঝেরপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে দিনমজুর খাইরুল ইসলাম (৪৮) নিহত হন। আহত হয়েছেন একই গ্রামের স্কুলপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে দিনমজুর আব্দুল হামিদ (৪০) বজ্রপাতে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, খাইরুল ইসলাম নিজ ধানক্ষেতে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে মাঠে যান। ধানক্ষেতে কাজ করার সময় বৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাঠের অন্য কৃষকেরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ওমর আলীর নিকট নেন। চিকিৎসক বলেন, বজ্রপাতের সময়ই খাইরুল ইসলাম মারা গেছেন। খাইরুলের আকস্মিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নিকজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আশে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মৃত্যুকালে তিনি পিতা মাতা, স্ত্রী ও দু সন্তানসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অপরদিকে একই গ্রামের স্কুলপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে আব্দুল হামিদ পশ্চিমপাড়া মাঠে ধানক্ষেতে কাজ করছিলেন। বজ্রপতের শব্দে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় বাড়িতে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে পরবর্তিতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামে বজ্রপাতে জিয়ারুল ইসলাম (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন মফিজুল ইসলাম (৪৫) ও হাবিব (৪০) নামের আরও দুই কৃষক। গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে বজ্রপাতের আঘাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত জিয়ারুল ইসলাম উজলপুর গ্রামের খোদা বক্সের জামাতা। তার বাবা-মার বাড়ি ভারতে। আহত মফিজুল একই গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে এবং হাবিব মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, বজ্রপাতে আহত ও নিহত হওয়ার আগে এদিন সকালে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা জমি থেকে ধানের চারা উত্তোলন করছিলেন। এ সময় প্রচ- শব্দে বজ্রপাত আঘাত হানলে জিয়ারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় তার পাশে কাজ করতে থাকা মফিজুল ও হাবিব আহত হন। আহত দু’জনকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।

Comments (0)
Add Comment