স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপণ্যের খরচ পোষাতে না পেরে বাজার থেকে খালি ব্যাগ হাতে ফেরার মতো অবস্থা অনেকের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গত এক সপ্তাহে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ, আদা, এলাচ, ব্রয়লার মুরগি, চিনি ও ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে কাঁচা মরিচ, শাকসবজি, মাছ, দেশি মুরগি, ফলমূলসহ অন্যান্য খাদ্যের দামও বেড়েছে। এমনকি গুঁড়া দুধ, সাবান, নারকেল-সরিষার তেল ও বিভিন্ন প্রসাধনীর দামও বেড়েছে এ সময়ের ব্যবধানে। তবে এসব পণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব টিসিবির তথ্যে থাকে না।
টিসিবি বলছে, তাদের তথ্যে গত এক সপ্তাতে বাজারে শুধুমাত্র আমদানি করা হলুদের দাম কমেছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। যদিও এ পণ্য এক বছর আগে ১৪০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হতো। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম হলেও বছর ব্যবধানে তা ২১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলো সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যার মধ্যে সবেচেয় বেশি বেড়েছে শুকনো মরিচের দাম। যা এখন প্রতি কেজি ৫০০ টাকা টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে পণ্যটির দাম। শুকনো মরিচের দাম বাড়ার প্রধান কারণ ছিল কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের কেজি ২৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেসময় তালমিলিয়ে শুকনো মরিচের দামও বাড়ে। তবে কাঁচা মরিচের তুলনায় প্রয়োজন কম হওয়াতে টের পাননি অনেকে।
টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে এখন ৫০-৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৫০ টাকার মধ্যে ছিলো। একইভাবে চিকন চালের দাম ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা।
এছাড়া বাজারে খোলা আটা ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ময়দা ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন তেল ২ শতাংশ, মসুর ডাল ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ, পেঁয়াজ ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির ডিম ১০ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে রসুন, আদার দামও। একটি পরিবারের জন্য এসব পণ্যই প্রতিদিনের জন্য অপরিহার্য।
এদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় বেশকিছু পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল চাল। এরপর তেল, চিনির দাম বৃদ্ধি এবং শেষে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। এ নিয়ে বিক্রেতারা এ কথা, ওই কথা বললেও ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের এসব কারণকে অজুহাত বলে অভিযোগ করছেন। তাদের অভিযোগ, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন। তবে হিসাব করলে দেখা যায়, একটি বড় ট্রাকে ২৫০ বস্তা চাল আসে। অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ কেজি। তাহলে ট্রাকভাড়া ৭ হাজার টাকা বাড়লে বাড়তি ভাড়ার কারণে প্রতি কেজি চালে মাত্র ৬৪ পয়সা বেশি খরচ হচ্ছে। যেখানে চালের দাম এক সপ্তাহের মধ্যে বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ টাকা।
ক্রেতাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেমন নজরদারি প্রয়োজন সেটা নেই। দেশে এখন যে নজরদারির চর্চা আছে, সেটা লোক দেখানো। পণ্যের দাম বেড়ে যখন বাজারে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন হুটহাট কিছু অভিযান চলে। যে পণ্যের দাম বাড়ে, শুধু সেই পণ্যের জন্য দু/চারজন বিক্রেতাকে মাঠপর্যায়ে জরিমানা করে দায়সারা কাজ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যৌক্তিক কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিকভাবে যা বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার মুনাফাখোর হয়ে গেছেন। দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতাকে তারা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের এ কারসাজি ঠেকাতে দেশে বেশকিছু বিদ্যমান আইনও আছে। তবে সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই। ফলে দিনে দিনে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সরকারকে এখন অত্যন্ত কঠোর হতে হবে, তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।