কাবিতে অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার: উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘ ১শ ৬৩ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর শিক্ষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনকারী শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকালে ১০টা ২০ মিনিটে অনশন ভাঙেন তারা। তবে প্রিয় শিক্ষকের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন নানা ঘটনার পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের আন্দোলনে পরিণত হয়। বুধবার তা ১৩ দিনে গড়িয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের অনশনের সাত দিন পেরিয়ে অষ্টম দিনে পৌঁছুনোর আগে ডক্টর জাফর ইকবাল দাবি মেনে নেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান শিক্ষার্থীদের। বুধবার ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পৌঁছান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ডক্টর ইয়াসমিন হক। এরপর ভোর ৪টা থেকে দেড় ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনশনকারীদের সব কথা মন দিয়ে শুনেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা বলেন। সঙ্গে অধ্যাপক ইয়াসমিন হকও শিক্ষার্থীদের অনেক বোঝান। অবশেষে অনশনরতরা জাফর ইকবালকে সবাই একযোগে অনশন ভাঙবেন বলে প্রতিশ্রম্নতি দেন। পরে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে একে একে প্রত্যেককে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান ডক্টর জাফর ইকবাল। এর আগে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে ডক্টর জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। এখানে শিক্ষার্থীরা সবাই বাইরে থেকে শীতে কষ্ট করছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু তাদের জন্য কোনো মেডিকেল টিম নেই। যারা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করত তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ। শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমের সামনে কথা দিয়েছ, এই অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দিবা এটা মানা যায় না। সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে, আদালতে তোলা হবে। তারা কথা দিয়েছেন ছাত্রদের জামিন দেওয়া হবে।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমাদের আন্দোলনে ৩৪ জন ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। এই ভিসি পদত্যাগ করলে তারাও পদত্যাগ করতে চেয়েছে। আমি ৩৪ জন ভিসির পদত্যাগ দেখতে চাই। তোমরা সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নাড়া দিয়েছ।’
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার পর দুপুর ১টা থেকে ক্যাম্পাসে কমে গিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টা ২১ মিনিটে অনশনের পর দুপুর একটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা হতে থাকে। বিকেল ৩টায় আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো আনাগোনা বা কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। ভিসির বাসভবনের সামনে অনশনকারীদের বিছানাপত্র গোছাতে দেখা যায় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে। পুরো ক্যাম্পাসে কয়েকজন সাংবাদিক, আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকজন লোক রয়েছে। ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সবুর খান বলেন, ‘রাতে কেউ ঘুমোয়নি। শিক্ষার্থীরা সবাই ক্লান্ত, বিশ্রামে গিয়েছে। অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চলবে। সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সবাই জড়ো হবে। সঙ্গে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ অনশন ভাঙার পর শিক্ষার্থীদের খবর জনতে চাইলে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারী সবুর খান ও আমিনা জানান, ‘অনশনরত ছিল ২৮ জন। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাগিব রাবেয়া হাসপাতালে ২৪ জন গিয়েছে চিকিৎসা নিতে। আর বাকি ৪ জন বাড়িতে চলে গেছেন। ওরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেবে।’