ওপারে চলছে থেমে থেমে গোলাবর্ষণ : সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশিদের
স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমার সীমান্ত এখনো থমথমে। ওপারে থেমে থেমে গতকালও গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। তবে আগের দিনগুলোর চেয়ে এর মাত্রা ছিল কম। সীমান্তবাসীরা জানান, ওপারে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সে দেশের গেরিলা বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ থামেনি। রোববার রাতেও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের আকাশে যুদ্ধবিমান ও ফাইটার হেলিকপ্টারকে উড়ে উড়ে গোলাবর্ষণ করতে দেখা গেছে।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ৩ শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাবাসীর তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি গতকাল বলেছেন, ‘প্রয়োজন হওয়া মাত্রই সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্তের অতি কাছের বাসিন্দাদের প্রথম দফায় অস্থায়ী ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে ক্রমান্বয়ে অন্যদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে।’ সকালে সীমান্ত পরিস্থিতি দেখতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রুপাড়া ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি এবং আশু করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জানান, দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে যে গোলাগুলি চলছে তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশিদের ওপর। এরই মধ্যে স্থলমাইন বিস্ফোরণে একজন আহত এবং মর্টার শেল নিক্ষেপে একজন নিহতসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে নিক্ষিপ্ত মর্টার শেল এপারে এসে পড়ায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় প্রয়োজনে সীমান্ত লাগোয়া মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘গোলাগুলির কারণে সীমান্তের কাছাকাছি ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ে স্থাপিত এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র আমরা কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং স্কুলে স্থানান্তর করেছি। বর্তমানে পরীক্ষার্থীদের সেখানে নেওয়া-আনার কাজে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন।’ জেলা প্রশাসকের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করার সময় উপস্থিত ছিলেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জনগণ যেন আতঙ্কিত না হয় সে পরিবেশ সৃষ্টিতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’
রেজু গর্জনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনামুল হক জানান, তিনি নিজেও রোববার রাতে আকাশে সামরিক বিমানকে চক্কর দিয়ে গোলাবর্ষণ করতে দেখেছেন। গোলাগুলির কারণে স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। তিনি জানান, তার বিদ্যালয়ে ১৩৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে গতকাল মাত্র ৪৭ জন উপস্থিত ছিল।
তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানরত কোনারপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ জানান, শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দিতে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী মর্টার শেল নিক্ষেপ করে ভয় দেখাচ্ছে। তিনি জানান, ২০১৮ সালের ২ মার্চ তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল। সে সময় প্রতিদিন গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যেত। এ ছাড়া ওপার থেকে মাইকিং করে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়। মাইকে হুমকি দেওয়া হতো, রোহিঙ্গারা এ এলাকা ত্যাগ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলা হবে। সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তৎপরতায় সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা সদস্যদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার সরকার।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আরফে আহমদ জানান, বিজিবির পক্ষ থেকে পাঁচটি বর্ডার আউটপোস্ট স্থাপন করে নিয়মিত টহল চালানোর কারণে সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। বর্তমানে সীমান্তে বিজিবির আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে গতকাল সীমান্ত পয়েন্টগুলোয় বিজিবিকে সশস্ত্র টহল দিতে দেখা গেছে। বিজিবি সদস্যরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভূখ- ও জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা সার্বক্ষণিক টহল বজায় রেখেছেন।