রাজধানীর আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান তুষ্টির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় অসুস্থতাকে সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ। তুষ্টির পরিবারের অভিযোগ, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। সামান্য এলার্জির সমস্যা ছাড়া তার বড় কোনো অসুখ ছিল না। এ দাবি তাদের। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে পরিবার। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে ইশরাত জাহান তুষ্টির স্বজনরা।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার দিন গত শনিবার ভোর রাত সোয়া ৫টায় তুষ্টির রুমমেটের ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট দরজা ভেঙে তাকে বাথরুম থেকে বের করে। বাথরুমের দরজার সিটকিনি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। এ সময় পানির কল থেকে পানি পড়ছিল।
দরজা ভাঙার পর তুষ্টিকে বাথরুমের ফ্লোরে কাত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কলের পানিতে তার পুরো শরীর ভিজে যায়। তুষ্টির পরনে ছিল লাল গেঞ্জি এবং নীল রংয়ের পাজামা। বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে খোলার কোনো সুযোগ ছিল না।
তুষ্টির রুমমেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার ঠাণ্ডা এবং এলার্জি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদন করার সময় তার সম্পূর্ণ শরীর পরীক্ষা করে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে স্থানীয় কলেজের প্রভাষক তুষ্টির চাচা ইমাম হোসেন মেহেদী বলেন, তুষ্টির বড় কোনো অসুখ ছিল না। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে তার অ্যাজমার সমস্যা, কাশি ইত্যাদি ছিল। সে ইনহেলার ব্যবহার করতো। এগুলো কোনোটিই সঠিক তথ্য নয়। তার সামান্য এলার্জির সমস্যা ছিল। এলর্জির সমস্যার জন্য তুষ্টি এলাট্রল জাতীয় ওষুধ খেতো। সে কখনোই ইনহেলার ব্যবহার করতো না।
তুষ্টির চাচা ইমাম হোসেন মেহেদী জানান, তুষ্টির বাবা কৃষিকাজের পাশাপাশি ছোট ব্যবসা করেন। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে একটু একটু করে নিজ হাতে গড়েছেন চাচা ইমাম হোসেন মেহেদী। মানবিক বিভাগ থেকে তুষ্টির এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় ফলাফলই ভালো ছিল তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো নম্বর পেয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হন। পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা ছিল তুষ্টি বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হবে। তুষ্টি সেইপথে একটু একটু করে এগুচ্ছিলেন। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছর বন্ধ থাকায় পুরো সময়টাতে বিসিএস পরীক্ষার জন্য অর্ধেকেরও বেশি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। অনার্স শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, তুষ্টি যথেষ্ট ভদ্র এবং শান্ত মেয়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন কারো সঙ্গে খুব বেশি আড্ডা দিতে পছন্দ করতো না। এমনকি তার ব্যক্তিগত কোনো প্রেম সংক্রান্ত বিষয় ছিল না। রান্নাবান্নার জিনিসপত্র আনতে নিচে যাওয়া ছাড়া পুরোটা সময় কক্ষেই থাকতো।
নিহতের বাবা আলতাফ মিয়া কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার তো আর কিছু রইলো না। মেয়েকে নিয়ে বড় আশা ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে। টানাপড়েনের সংসারে তার বিয়ের প্রস্তাব এলেও আমরা সম্মত হইনি। অভাবের সংসার। ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে সৌদি আরব গিয়েছে শুধুমাত্র বোনকে মানুষের মতো মানুষ করতে। কীভাবে কি হলো জানি না। মেয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হলে মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার প্রত্যাশা করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ফরেনসিক প্রতিদেন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।