স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের অভয়নগর উপজেলার বর্ণী হরিশপুর বাজারের ‘মরিয়ম স্টোর’। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই দোকানে গত ৮ এপ্রিল নারিকেল তেল কেনার কথা বলে দুজন ক্রেতা প্রবেশ করেন। এরপর দোকানদারের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে কৌশলে মানিব্যাগ থেকে টাকায় মোড়ানো নেশাদ্রব্য নাকের কাছে নিয়ে শুকিয়ে তাকে স্মৃতিভ্রম করেন। এরপর তাদের কথা মতো দোকানদার শরিফুল ইসলাম নিজেই প্রতারকদের হাতে তুলে দেন ছয় লাখ টাকা। এসব নিয়ে দ্রুতই সটকে পড়ে প্রতারকরা। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্মৃতিভ্রম করে সর্বস্ব লুটে নেয়া এসব চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। তারা ‘ডেভিল ব্রেথ’ শয়তানের নিঃশ্বাস প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। রোববার সন্ধ্যায় ও রাতে ঢাকার ভাটারা থানা ও যশোর শহরের হোটেল সিটি প্লাজা থেকে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-ইরানি নাগরিক খালেদ মহিবুবী (৫৪), সালার মাহবুবী (১৬), ফারিবোরয মাসুফি (৫৭), বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ঘ্যানাসুর উপজেলার সারোয়ারের ছেলে খোরশেদ আলম (৫৩) ও বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে সাইদুল ইসলাম বাবু (৩৫)। অভিযানে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, বিদেশি মুদ্রা, পার্সপোট ও বিভিন্ন আইডি কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, অভয়নগর উপজেলার মরিয়ম স্টোরের মালিক শরিফুল ইসলাম গত ৫মে ৬ লাখ টাকা লুটে নেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে অভয়নগর থানায় মামলা করলে তদন্তে নামে যশোর ডিবির এলআইসি টিম। এর পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র ধরে আসামিদের নাম ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর ঢাকা ও যশোর থেকে দুটি অভিযানে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে আসামিরা সংঘবদ্ধ ‘ডেভিল ব্রেথ’ শয়তানের নিঃশ্বাস প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা যশোর খুলনাসহ ৩২ জেলাতে বিভিন্ন প্রতারণা করে আসছে। এই প্রতারক চক্র শুধু বাংলাদেশ না; বিভিন্ন দেশেও তাদের প্রতারণা করে এসেছে। এসব প্রতারক চক্র ২০১২ সাল থেকে এসব প্রতারণামূলক কাজ করে আসলেও সম্প্রতি ভয়াবহ মাদক স্কোপোলামিন প্রতারণা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনফারেন্সে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, ভয়াবহ মাদক স্কোপোলামিন; অপরাধ জগতে যেটির নাম ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের নিঃশ্বাস। ভয়াবহ এ মাদক পথচারীদের নিঃশ্বাসে প্রয়োগের মাধ্যমে ‘মাইন্ড কন্ট্রোল’ করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি চক্র। এ চক্রের খপ্পরে পড়ে তাদের হাতে স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যমতে ইতোমধ্যে চক্রটি যশোরসহ ৩২ জেলাতে সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রদের মধ্যে তিনজন ইরানি নাগরিক। এই ইরানি নাগরিকরা প্রথমে ফেসবুকে বাংলাদেশি তরুণ ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে নেটওর্য়াক তৈরি করে। এর পর তারা মূলত ট্যুরিস্ট ভিসাতে বাংলাদেশে আসেন। ট্যুরিস্ট ভিসাতে প্রবেশ করে বাংলাদেশের কয়েকজনের সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে যেসকল বাণিজ্য এলাকাতে এসব প্রতারণা কাজ করে আসছিলেন। ডেভিল ব্রেথ শয়তানের নিঃশ্বাস নামে কেমিক্যাল নামক দিয়েই তারা প্রতারণামূলক কাজ করে থাকে। এসব ইরানি নাগরিকের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও সম্প্রতি তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের প্রতারক সদস্যদের নিয়ে তারা লুকিয়ে এতদিন এসব প্রতারণা কাজ করছিলেন। প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন যশোর ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকারসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা।