স্টাফ রিপোর্টার: মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) আরও ক্ষমতা চান। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নসহ একাধিক বিষয়ে বাড়তি ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব এসেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। ৬৪ জেলার ডিসির পাঠানো প্রায় পৌনে তিনশ প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ করে এমন চিত্রই মিলেছে। আগামীকাল শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন। এ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসকরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নানা বিষয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, ‘জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব ও কার্যাবলি-২০১১’ অনুযায়ী, নির্দিষ্টভাবে ৬২টি বিষয় দেখভালের কথা উল্লেখ আছে। গত এক যুগে এসব দায়িত্বে পরিধি আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে লিখিতের বাইরেও সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে জেলা পর্যায়ে ডিসি এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে। এসবের পরও সংশ্লিষ্ট জেলার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাবও দিয়েছেন ডিসিরা। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আইন-নীতিমালা পরিবর্তনের সুপারিশ এসেছে তাদের কাছ থেকে।
বিশ্লেষকদের মতে, মাঠ প্রশাসনে ডিসি ও ইউএনও হাতে এমনিতেই অনেক ক্ষমতা আছে। এরপরও তারা আরও কিছু বিষয়ে নিজেদের এখতিয়ার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। যাতে স্পষ্টতই বোঝা যায় তারা আরও বেশি ক্ষমতার অধিকারী হতে চাচ্ছেন।
এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। প্রথম দিন ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। কর্মসূচি অনুযায়ী এবার ২১টি কার্য অধিবেশনসহ মোট ২৫টি অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে প্রথম দিন ৭, দ্বিতীয় দিন ৮ এবং তৃতীয় দিন থাকবে ১০টি অধিবেশন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গেও ভার্চুয়ালি সৌজন্য সাক্ষাতের সেশন হবে ডিসিদের।
আরও ক্ষমতা: পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে বৈধ লাইসেন্স দেওয়া হয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মতামত নেওয়ার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন মৌলভীবাজারের ডিসি। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, এতে যোগ্য ব্যক্তি বাছাই হওয়ার সঙ্গে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ইউএনওদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর অধীনে ১৮৬০ সালের দ-বিধির ২২৮ ধারা অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করেছেন নাটোরের ডিসি। দ-বিধির উল্লিখিত ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমের যে কোনো পর্যায়ে নিয়োজিত থাকাকালে কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে অপমান করে বা তার কাজে বাধা প্রদান করে, তবে সে ব্যক্তি ছয় মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদ-ে অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত যে কোনো পরিমাণ অর্থদ-ে অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবে।’
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা যথাক্রমে বিভাগীয় কমিশন ও ডিসি অফিসকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ঝালকাঠির ডিসি। তৃতীয় শ্রেণির (১১-১৬ গ্রেড) কর্মচারীদের সব পদে নিয়োগ ডিভিশনাল সিলেকশন বোর্ডের (ডিএসবি) অধীনে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ঢাকার ডিসি।
এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণ সমন্বয়ে ডিসির নেতৃত্বে কমিটি করার প্রস্তাব এসেছে বরিশালের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে। মাদারীপুরের ডিসি প্রস্তাব দিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র নিতে হবে। এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপের কথাও বলেন তিনি। অন্যদিকে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেট ও মাগুরার ডিসি। জেলা পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে কুমিল্লার ডিসির কাছ থেকে।