স্টাফ রিপোর্টার: জুলাইয়ের মাঝামাঝি সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বিএনপি। একদফা একমঞ্চে না আলাদা আলাদা ঘোষণা করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একদফা ঘোষণার দিনক্ষণ ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ঢাকায় সমাবেশ থেকে তা ঘোষণা করা হবে। বিএনপির একদফা আন্দোলনের মূল টার্গেট হচ্ছে ঢাকা। রাজধানীতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অনেক আগে থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রাথমিক পরিকল্পনা তৈরি করছে বিএনপির হাইকমান্ড। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ শুরু করেন তারা। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। এ সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিএনপি। তাদের সফরের পর আন্দোলনের গতি বাড়াতে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শিগগিরই সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচি চূড়ান্তের আগে সমমনা দলগুলোর মতামত নেয়া হচ্ছে। এবার হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন। রাজপথেই সবকিছুর ফয়সালা হবে। সেই প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে চাই। সরকারের নানা অপকর্মে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ। আমাদের আন্দোলনে তারা শরিক হয়ে নিজেদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার সংলাপসহ নানা কৌশল নিতে পারে। কিন্তু আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা ছাড়া কোনো সংলাপে যাব না আমরা। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে-এমন ঘোষণা দিলেই কেবল সংলাপে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবা হবে। সূত্র জানায়, সমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা বাস্তবায়নে চলতি মাসের শেষদিকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। যুগপৎভাবে পালন করা হবে এসব কর্মসূচি। পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে জামায়াতও। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সংলাপ বা সরকারের কোনো কৌশলে পা দেবে না তারা। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে দেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই রাজপথ থেকে ফিরবে তারা। আন্দোলন সফলে এবার কর্মসূচিতেও আনা হবে নতুনত্ব। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচি এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই এবার দাবি আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, বিগত দুটি আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ব্যর্থতার পেছনে অন্যতম কারণ ছিলো ঢাকায় কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারা। সারাদেশের মতো রাজধানীতে আন্দোলন হলে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হতো। অতীত আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় এবার ঢাকাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকায় জোরালো আন্দোলন ছাড়া সরকার পতন সম্ভব নয়। তাই এতদিন তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার কর্মসূচির ক্ষেত্রে ঢাকাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। অর্থাৎ এবার কর্মসূচি হবে ঢাকামুখী অথবা কর্মসূচির মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে ঢাকা।
জানা যায়, সমমনা দলগুলোও ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি জোরালোর পরামর্শ দিয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের মতবিনিময়েও একই মত আসে। তাই সবার মতামতের ভিত্তিতে ঢাকা ঘিরেই আন্দোলনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে একদফার শুরুতে বিগত সময়ে চলমান কর্মসূচিই অব্যাহত রাখা হবে। বিক্ষোভ সমাবেশ, পদযাত্রা, গণ-অবস্থানসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাধ্য না হলে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। এভাবে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে সেটাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঢাকামুখী রোডমার্চ, চলো চলো ঢাকা চলো, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির পাশাপাশি ঢাকায় টানা অবস্থানের ঘোষণাও আসতে পারে।
১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যার মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, একদফা দাবিতে শিগগিরই আন্দোলন শুরু হচ্ছে। দাবি একটাই-শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেই দাবি আদায়ে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখা হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে রাজপথে নামতে দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। হাইকমান্ডের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে পালন করা হবে এবারের কর্মসূচি।
তিনি বলেন, এ সরকারের পতন ছাড়া নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না। ভয়ভীতি, হামলা-মামলা হুলিয়া-কোনো কিছুতেই তাদের আটকাতে পারবে না। কারণ, দীর্ঘ ১৫ বছর সরকারের নির্মম নির্যাতনে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। জীবন বাঁচাতে দেয়াল টপকাতেই হবে।