স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউন নিয়ে উৎকণ্ঠা কাটছে না ব্যবসায়ীদের। মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা সংগ্রহ ও জনসচেতনতা কর্মকা-ে জোর না দিয়ে আমলাদের সমন্বয়হীনতার মুখে বার বার লকডাউন ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, লকডাউন কেউ মানছে না। কেউ মাস্কও পরছে না। সংকট উত্তরণে টিকা জরুরি। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। পর্যটন, পরিবহন, লঞ্চসহ সেবা খাতের ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হওয়ার পথে। বাড়ছে সুদের চাপ। বেতন-বোনাস পরিশোধের চাপ। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিসহ অন্যান্য বিল পরিশোধের হাত থেকে রেহাই নেই। হুমকিতে বিনিয়োগ। এ পরিস্থিতি উত্তরণে প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আইনের কঠোর প্রয়োগ। খোলা রাখতে হবে জীবন ও জীবিকার সব দুয়ার।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই প্রথম সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু গতকাল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা টিকার ব্যবস্থা না করতে পারা। দেড় বছর ধরে লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিবহন, লঞ্চ, পর্যটন ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আবারও লকডাউনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ধ্বংস হয়ে গেছেন। সংকট উত্তরণে টিকা জরুরি। একই সঙ্গে করোনাকালে ব্যাংক ঋণের সুদ স্থগিত করতে হবে। এটা না করলে ব্যবসা বাঁচবে না। এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে দেশে লকডাউন কার্যকর হয় না। বরং ব্যবসায়ীরা একের পর এক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অথচ সরকার টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি। করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেবা খাতের। বিশেষ করে পর্যটন, পরিবহন, লঞ্চ ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন। কোথাও কোনো ব্যবসা নেই। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ আদায়ে অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সুদ মওকুফের জোর দাবি জানাই।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিকেএমইএ সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এ এইচ আসলাম সানী বলেন, লকডাউন কেউ মানছে না। কেউ মাস্কও পরছে না। গ্রাম থেকে শহরে সবারই একই অবস্থা। অনেক মানুষ মনে করেন- করোনায় বড় লোক মরে, গরিব মরে না। কারণ- বড় লোক বা সেলিব্রেটি মরলে, খবর হয়। গরিব মরলে হয় না। আসলে মানুষের ধারণা বদলাতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। তা হয়নি। এই প্রচারণা রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে আমলাদের দিয়ে হবে না। গ্রামে সঠিকভাবে প্রচারণা হয়নি। এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন, করোনা আর লকডাউনে পর্যটন ব্যবসা এখন ধ্বংসের পথে। উদ্যোক্তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সামনে ঈদ। এমন সময় আবারও লকডাউন হওয়া একদিকে কর্মচারীদের বেতন- বোনাসের চাপ, আরেকদিকে বিনিয়োগ হুমকিতে পড়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিসহ অন্যান্য বিল পরিশোধের হাত থেকে রেহাই নেই। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা, আগামী এক বছর ভ্যাট হার কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ ও রেস্টুরেন্ট খাতে প্রণোদনা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন পর্যটন খাতের এই উদ্যোক্তা। ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি বলেন, করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটনশিল্প। লকডাউনে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলে উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হবে। কর্মচারীরা বেকার হবে। ব্যাংকের ঋণ ও সুদ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি- আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদ স্থগিত করা ও আগামী তিন বছরের জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। এটা না হলে এই খাত ধ্বংস হবে।