স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহণ বাসে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও সোহাগপল্লী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে লুট হওয়া একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হলো। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার রাজা মিয়াকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে ঘটনায় করা মামলাটি মধুপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ দায়িত্ব পাওয়ার পরই সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতার মো. আউয়াল গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কাঞ্চনপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে ও নুরনবী কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধুনারচর গ্রামের বাহেজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার শিলাবহ পশ্চিমপাড়া গ্রামে বসবাস করেন। তাদের মধ্যে মাদক সেবনের লক্ষণ রয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার তার কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রথম আসামি রাজা মিয়ার তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে আউয়ালকে গাজীপুর জেলার সূত্রাপুর টান কালিয়াকৈর এলাকা থেকে ভোরে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অপর আসামি নুরনবীকে সকাল ৯টায় কালিয়াকৈরের সোহাগপল্লীর শিলাবহ পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। নুরনবীর কাছ থেকে যাত্রীদের একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শনিবার (আজ) তাদের আদালতে পাঠানো হবে। নুরনবীর বিরুদ্ধে এর আগেও ডাকাতি ও ছিনতাই মামলা রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আরও কোনো অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আউয়াল ও নুরনবী। তবে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে তারা। পুলিশ সুপার বলেন, এই দুজন বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভুক্তভোগী ওই নারীর সামনে হাজির করা হবে। এজন্য আদালতের অনুমতি নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ঈগল পরিবহণ বাসের চালক, সুপারভাইজার সন্দেহের মধ্যে থাকায় তাদের মামলার বাদী করা হয়নি। মহাসড়কে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের হেড কোয়ার্টারসহ পরিবহণ চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। এদের মধ্যে তিন-চারজন টাঙ্গাইল জেলার। বাকিরা বিভিন্ন জেলার অধিবাসী। তবে তারা বসবাস করেন গাজীপুর, চন্দ্রা ও সাভার এলাকায়। এদিকে রিমান্ডে থাকা রাজা মিয়ার কাছ থেকে বাস ডাকাত চক্রের সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এর আগে তারা আরও কোনো ডাকাতি কর্মকা-ে অংশ নিয়েছে কিনা, তাদের দলের সদস্য সংখ্যা, তারা আর কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌন্দ্রুর থেকে ঈগল পরিবহণের একটি বাস নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি খাবার হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। সেখান থেকে যাত্রা শুরুর পর তিন দফায় যাত্রীবেশী ১১ জন ডাকাত বাসে ওঠে। বাসটি টাঙ্গাইল অতিক্রম করার পর ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা যাত্রীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে তাদের সব লুটে নেয়। এ সময় বাসে থাকা একাধিক নারী যাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। পরে বাসটি টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের দিকে ডাকাতরা নিয়ে যায়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাসটি মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া নামক স্থানে রাস্তার খাদে ফেলে তারা পারিয়ে যায়। স্থানীয় লোক ও ফায়ার সার্ভিস যাত্রীদের উদ্ধার করে। পরে পুলিশ এলে যাত্রীরা ডাকাতি ও নির্যাতনের বিষয়টি জানায়। ওই বাসের যাত্রী হেকমত মিয়া বাদী হয়ে মধুপুর থানায় বাস ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেন।