স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ নিশ্চিত করেছেন রাজধানীতে শনিবার বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সময় পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। তবে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন বলেন, শনিবারের ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেছে। আমরা জামিনের আবেদন করলেও আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গতকাল রাত ৮টা ১০ মিনিটে আদালতে নেওয়া হয়। এর আগে মির্জা ফখরুলের বিষয়ে পুলিশের সিদ্ধান্ত জানতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, হত্যা ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পল্টন থানায় যে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিন্তু তাকে কারাগারে পাঠানো হলো প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলার মামলায়। শনিবারের সংঘর্ষে কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। ওই হত্যা মামলাটিতে মির্জা ফখরুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানে মির্জা ফখরুলের বাসায় যায়। কথা বলে চলে আসার পর আবারও ফিরে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডিবি তুলে আনার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান দুপুরে বলেছেন, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। পরে যদি আমরা তেমন কিছু পাই, তদন্তের পর, তখন বলা যাবে। এ মুহূর্তে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনা ছাড়াও বাস পোড়ানো হয়েছে, বিভিন্ন ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের ১১৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো অনেকের জীবন সংকটাপন্ন। কিছুক্ষণ আগেই আমরা খবর পেয়েছি, আরেক জনের জীবন সংকটাপন্ন। বিএনপি মহাসচিবকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম। গতকাল সকালে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মির্জা ফখরুলকে আটক করে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে যে তাকে নিয়ে যাবে এটা আাামি কল্পনা করতে পারি নাই, আমি মেনে নিতেই পারছি না। আমি আশা করব, যতটা সম্ভব তাদের কথাবার্তা যা আছে; সেগুলো সেরে তাকে আবার ফেরত দিয়ে যাবেন। আমি আশা করব তাদের কাছ থেকে; এইটুকু অন্তুত আশা করতে পারি। তার যে অসুস্থতা সেখানে তার থাকার কথা নয়।’ গুলশান ৭১ নম্বর সড়কে ‘দিলরুবা’ অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় থাকেন বিএনপি মহাসচিব। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আগের উত্তরার ভাড়া বাসা পরিবর্তন করে গুলশানে আসেন তারা। সকালে শতাধিক পোশাক পরা পুলিশ নিয়ে ভবনটির সামনে যান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ভবনটি বাইরে থেকে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় বাসায় মির্জা ফখরুলের একান্ত সহকারী ইউনুস মিয়া ও একজন গৃহকর্মী ছিলেন। পাঁচ থেকে সাত জনের একটি গোয়েন্দা দল মির্জা ফখরুলের বাসায় প্রবেশ করেন। তারা প্রথমে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। রাহাত আরা বলেন, ‘ওরা সকালে আসল, ওই সময় আমরা চা খাচ্ছিলাম। এসে প্রথমে বলল যে স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলব। কিছু কথাবার্তা বলে নিচে চলে গেল। যাওয়ার সময়ে তারা বাসার ভেতরের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস এবং এই অ্যাপার্টমেন্টে নিচের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে গেছে।’ এর ঠিক ১০ মিনিট পরে আবার তারা ফিরে আসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু ধারণা তারা নিচেই ছিল। ১০ মিনিট পরে আবার আসল এবং বলল যে, স্যার আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। যা বলে প্রত্যেক বার। বলে স্যার, উপরের অর্ডার আছে, আপনাকে যেতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, এভাবে নিয়ে যাওয়া…আমার বলার কোনো ভাষা নেই। ৭৫ বছর বয়সি একজন লোক। তিনি অসুস্থ, প্রচ- অসুস্থ। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবিলম্বে মুক্তি চেয়েছেন তার জ্যেষ্ঠকন্যা ড. শামারুহ মির্জা। তিনি জানান, শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের কারণে অসুস্থ হয়েছেন মির্জা ফখরুল। এদিন রাতে তাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আব্বুর বয়স ৭৬ এবং তিনি গত রাতেও প্রচ- অসুস্থ ছিলেন। পুলিশের টিয়ার গ্যাস তার ফুসফুসে গেছে এবং তিনি রাতেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। আমি অবিলম্বে আমার আব্বুর মুক্তি চাই।’