স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতারই একটি অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটা শুধু বিদ্যুতের একটা ঘটনা নয়। সর্বক্ষেত্রে ঘটনাগুলো ঘটছে। যার ফলে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য মূলত দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট গ্রহণ ও বিভিন্ন উন্নয়নের প্রকল্প করা, যার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি। এই সরকার এখন দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আসাদ গেটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাসায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। অসুস্থ সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকুকে দেখতে সেখানে যান বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তবে বিএনপি একটি সূত্র জানায়, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে সেখানে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সেখানে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা চলমান বৈঠক প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। পাশাপাশি গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে এক সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ইস্যুতে টুকুর বক্তব্য, জামায়াতের বিবৃতি ও অনলাইন পোর্টালে দেশের বাইরে অবস্থান করা বিএনপি সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের লেখা একটি কলাম নিয়েও আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাষ্ট্রের ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (ক্রিটিকাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার-সিআইআই) ঘোষণা করাকে ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এটা ভয়াবহ ব্যাপার। কর্তৃত্ববাদী এই সরকার আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে। সব তথ্য পাওয়া থেকে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে, এটা তারই বহির্প্রকাশ। এখন আর কোনো ফাঁকফোকর রইল না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর গেজেট প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।’
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার তো সব সময় চিৎকার করছে, আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত উৎপাদনও হচ্ছে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে বিএনপি সেমিনারে করে বলেছে। কিন্তু মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে ঘটনা ছিল অস্বাভাবিক ব্যাপার। প্রায় ৮ ঘণ্টা দেশের বেশিরভাগ জায়গাতে বিদ্যুৎ ছিল না। ইট ইজ এ টোটাল ব্লাক আউটের মতো হয়েছে। এর ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। সব কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফিল্টিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিকে এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। নির্বাচিত সংসদ নেই। জবাবটাও চাইতে পারছেন না। প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটছে। তাদের জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এই ঘটনা ঘটছে। এই সরকার একটা বারডেন হয়ে গেছে, এটা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। দেশের উপরে এই সরকারকে না সরালে এই জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে। এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই রাস্তা তা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। একই সঙ্গে কেয়ারটেকারের অধীনে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সারাদেশে যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দিয়েছে সেগুলো ইউনিফাইড স্পেসিফিকেশনে দেয়া নাই। পাওয়ার স্টেশন কোনোটা খুব নিউ জেনারেশনের আবার কোনটা পুরোনো। এদের মধ্যে সিনক্রোনাইজড করা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ শুধু জেনারেশনে চলে না, ট্রান্সমিশনে লাগবে, ডিসট্রিবিউশন লাগে। এগুলোর কিন্তু খুব একটা উন্নতি হয়নি। খালি বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়েই গেছে। আরও হবে ভবিষ্যতে। কারণ সিনক্রোনাইজ করেনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী মডেল অব ইকোনমি-এটা (জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়) তার প্রতিফলন। তারা দুর্নীতির জন্য একচেটিয়া কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়েছে। সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় এগুলোর টেন্ডার হয়নি। তাদের (সরকার) নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। আইনও করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা যাবে না এবং তাদেরকে সব সুযোগ-সুবিধাসহ ফিক্সড চার্জসহ নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে জনগণকে আজকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে।