স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি গ্রামই এক একটি শহরে রূপান্তরিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, এটা কোনো কঠিন কাজ নয়।
গতকাল সকালে ডিএসসিএসসির কোর্স সমাপনী (২০২০-২১) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও আর ঘরহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষেরই একটা ঠিকানা হবে এবং প্রতি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্টকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন শেখ হাসিনা। এ কোর্সে ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ কর্মকর্তা ও ১০ নারী কর্মকর্তাসহ সশস্ত্র বাহিনীর ২২৫ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে এদিন পিএসসি অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ২০৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস আপনাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমরবিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, প্রশিক্ষণলব্ধ এ জ্ঞান আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। কোনো দেশ এককভাবে চলতে পারে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। এ জন্য আমাদের জ্ঞানের পরিধিটাও অনেক বিস্তৃত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্থিমিত তখন মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ নিজস্ব উদ্ভাবিত উপায়ে অত্যন্ত অল্প সময়ে ও কম খরচে নিরাপদ ই-লার্নিং সল্যুশন স্থাপন করে নিজস্ব সার্ভার এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপদ অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ফলে একদিনের জন্যও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি। জাতির পিতার ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার তৎকালীন সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করবো, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাস্তবে এটা আমরা করতে পেরেছি। আজকে আমাদের এ একাডেমি সারা বিশ্বের বিস্ময় এবং সবাই এটা অনুভব করেন এবং এর প্রশংসা করেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়- এ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সব দেশের একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের আশ্রয় দান এবং নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা এর সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। কেননা এজন্য আমরা কোনো দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এ জন্য বন্ধুত্বসুলভ একটা মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে যারা অন্যায় করেছেন নিশ্চয়ই আমরা সেটা বলবো এবং তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নেবে সেটাই আমরা চাই।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নির্যাতিত জনগণকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ বিশেষ প্রশংসা ও সাধুবাদ পাচ্ছে। নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জনগণের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনসহ সব ক্ষেত্রে তার সরকার ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় রেখে চলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের যুগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের মাঝে একজন বিদেশি নারী অফিসারসহ মোট ১০জন নারী অফিসার রয়েছেন। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী অফিসারের অংশগ্রহণ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, নতুন জনবল অনুমোদনের পাশাপাশি স্টাফ কলেজের বেশ কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ছাড়া এ রকম আরও নির্মাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে যা ভবিষ্যতে এ কলেজের প্রশিক্ষণ কলেবরকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করবে।