খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে কোনো অবস্থায়ই যাতে খাদ্যের মজুত কমে না যায়, সে বিষয়ে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি রোববার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে সচিব সভার সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিব সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ১৬ লাখ টন খাদ্য মজুত রয়েছে। খাদ্যের মজুত যাতে কমে না যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ ও টিসিবিসহ খাদ্যবন্ধব কর্মসূচি যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি কর্মচারীদের আর আলাদা করে সম্পদের হিসাব সরকারকে দিতে হবে না। প্রতিবছর রিটার্ন দাখিলের সময় যে এক পৃষ্ঠায় সম্পদের বিবরণী দিতে হয়, সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করলেই হবে। তিনি বলেন, ‘এনবিআর, আমি এবং জনপ্রশাসন সচিব বসে ছিলাম। বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিয়েছি। প্রতিবছর আমরা যে রিটার্ন দিই, সেখানে একটি পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পত্তির হিসাব দিতে হয়, ওই পৃষ্ঠাটা জনপ্রশাসনকে দিয়ে দেব।’ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা যেনো কোনোভাবেই কারও কোনো আশ্রয় বা সহায়তা কিংবা কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সচিবদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে জঙ্গির বিষয়ে একটু বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছেন, পুলিশ কিছু জঙ্গিকে (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ডিটেক্ট করেছে এবং এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কিছু পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তাদের ট্র্যাক করে ধরা এবং জনগণকে সতর্ক করে দেয়া, তারা যেন কোনোভাবেই কারও কেনো সহায়তা বা কোনো আর্থিক বেনিফিট নিতে না পারে, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২৩ সাল কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পার হবে। এ সময় ডলারের দাম বেড়ে যাবে। করোনাভাইরাসের মহামারি শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তাই প্রকল্প ব্যয় যাতে রেশনাল হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, জ্বালানি, সার, খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের আমদানি কমাতে হবে। প্রসাধনী, আপেল, আঙ্গুরসহ বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ করার মাধ্যমে ব্যয় কমাতে হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য ফিজিবিলিটি ও অ্যাসেসমেন্ট সঠিকভাবে করতে হবে এবং বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশি সহায়তায় নেয়া প্রকল্প সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন বাজেট কমানো হয়নি, রেভিনিউ বাজেটে সংকোচন করা হয়েছে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সচিবদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লাইভস্টক ও ফিসারিজের নতুন ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন জমিতে এগুলো যাতে উৎপাদন করা হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় অনেক কমে যাবে। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা ৩০-৩৫ বছর ধরে এ বিষয়ে কাজ করছে। এই খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে আয় ৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও সচিবদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা এবং ভূমির ই-রেজিস্ট্রেশন মিউটেশন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়েও সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সভায় ১৭ জন সচিব বক্তব্য দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। দুর্ভিক্ষ যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই কাজ করুন : করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘায়িত বৈশ্বিক সংকটে দেশকে যাতে কখনই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে না হয় সেজন্য আগে থেকে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। সচিব সভায় সূচনা বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে এবং মানুষকে সঙ্গে নিজে কাজ করতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিনি প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া, অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসতে জনগণকে সচেতন করা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিপর্যস্ত তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং পালটা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছে। একটি বা দুটি দেশ এ সংকটের সুবিধা পাচ্ছে। তবে উন্নত দেশসহ বাকি দেশগুলো কষ্টে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বহুগুণ বেড়েছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। এটিও আমাদের দেশে আঘাত করেছে। তিনি বলেন, আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু নয়। আমার কথা হলো আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে দেশ কোনো বিপদে না পড়ে। পাশাপাশি আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক জিনিস এখনো কিনতে হয়। যেসব জিনিস দেশে উৎপাদন হয়, সেসব জিনিসে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। যাতে দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারি। বাইরের ওপর নির্ভরশীলতা যতটা পারা যায় কমাতে হবে।

Comments (0)
Add Comment