কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র্র করে আদালত চত্বরে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় অন্তত তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গতাকল সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলা ভাঙচুরের সময় এক শিক্ষানবিশ আইনজীবী তার মুঠোফোন দিয়ে দৃশ্য ধারণ করার সময় তাকে মাথায় আঘাত করে দৃর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহত শিক্ষানবিশ আইনজীবীর নাম মজিবুল হক (৫০)। তিনি কুমারখালী উপজেলার বাধবাজার এলাকার সামসুদ্দীনের ছেলে। কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও মিডিয়া) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ঘটনার পরপরই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। একজন আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী বুধবার কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে সভাপতি পদে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে দুজন বিএনপি, দুজন আওয়ামী লীগ, একজন জামায়াত ইসলামী ও একজন জাসদ সমর্থিত। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপির দুজন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন উপলক্ষে আদালত চত্বরে শামিয়ানা টাঙিয়ে চেয়ার টেবিল দিয়ে অন্তত ছয়টি নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করেছেন প্রার্থীরা। ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকাতে ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ডে ভরে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আইনজীবী জানান, নির্বাচন ঘিরে কয়েক দিন ধরে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। নিজেদের ভোট টানতে প্রচারণাও বেশ জমে উঠেছে। সোমবার সকাল থেকেই আইনজীবীরা আদালতে প্রতিদিনের মতো মামলা পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় ক্যাম্পগুলোতে তেমন কেউই ছিলেন না। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একদল তরুণ-যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন। কোনো কথা ছাড়াই তারা একে একে আদালত চত্বরে থাকা ছয়টি নির্বাচনী ক্যাম্পের চেয়ার টেবিলে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। পাশাপাশি ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এ সময় শিক্ষানবিশ আইনজীবী মজিবুল হক হামলার দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করছিলেন। হামলাকারীরা ওই আইনজীবীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। ১৫ মিনিট ধরে তা-ব চালানোর পর তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
প্রকাশ্যে ব্যস্ত এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলেও হামলাকারীদের পরিচয় নিয়ে মুখ খুলছেন না আইনজীবীরা। তবে আদালত চত্বরে থাকা আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার একাধিক ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে।
দুপুর সোয়া ১২টায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি ক্যাম্পের শামিয়ানা ছেড়া, ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অধিকাংশ চেয়ার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রছেছে। একটি স্থানে অনেক রক্ত জমাট বেঁধে আছে। তবে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। আদালত চত্বরে নির্বাচনী একটি ক্যাম্পের পাশে পিঁয়াজু বিক্রি করছিলেন মো. রাজু শিকদার। তিনি বলেন, ‘কিছু লোকজন আসলো, এসেই ভাঙচুর শুরু করলো। তাদের কয়েকজনের মুখে মাস্ক পরা ছিল। বেশ কয়েকজনের হাতে বাটাম ছিল। ভাঙচুরের পর তারা চলে যায়।’
জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার দীর্ঘ ২৫ বছরের পেশাগত জীবনে কুষ্টিয়া আদালতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখিনি। একটি পক্ষ নির্বাচনে ভরাডুবি নিশ্চিত জেনে বহিরাগতদের দিয়ে হামলা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের অভ্যন্তরে তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে তিনি দাবি করেন, সোমবার কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীসহ তাদের দলের কয়েকজন একটি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে গিয়েছিলেন। এ সময় সেখানে কিছু যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীকে ঘোরাফেরা করতে দেখে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এর জের ধরে আদালত চত্বরে সামান্য কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।