স্টাফ রিপোর্টার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কুমিল্লা ও রংপুরের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনার পেছনে যে বা যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব উইং বিষয়টি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। আমরা বেশকিছু টেলিফোন বার্তাও পেয়েছি। সেগুলো শুনছি। সব বের করে ফেলবো, তবে একটু সময় চাইছি। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এসব হামলার উদ্দেশ্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা। রংপুরে আইনশুঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। সব উইং কাজ করবে। ফেসবুকের যেসব লিঙ্ক থেকে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করা হচ্ছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, কুমিল্লার ঘটনাটি আমরা শিগগিরই জানাবো। আমরা তদন্তের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। তিনি বলেন, এ হামলার উদ্দেশ্য হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে বাংলাদেশকে দূরে সরিয়ে রাখা। তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি করেছে। সেখানে চারজন নিরীহ মানুষ মারা গেছে। নোয়াখালীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খাবারের বিরতিতে থাকার সুযোগে কিশোর বয়সি হামলা চালায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান আরও বলেন, কুমিল্লা ও রংপুরে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা একইসূত্রে গাঁথা। রংপুরের পীরগঞ্জে ২৫টি বাড়িতে আগুন, ৯০টির বেশি বাড়িঘরে লুটপাট এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বাড়িঘর তৈরি করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জে ফেসবুকে এক কিশোরের কাবা শরিফ নিয়ে দেয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি ঘটেছে। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় সবাই কষ্ট পেয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনা আঁচ করে ছেলেটি যেখানে থাকতো, সেখানে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে ছেলেটিকে পাওয়া যায়নি। সেই গ্রামটি রক্ষার জন্য পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ এলাকা ছেড়ে পীরগঞ্জ থানার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে গিয়ে দুষ্কৃতকারীরা কয়েকটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব, বিজিবি ঘটনাস্থলে গেছে। নিরাপত্তার যত ধরনের ব্যবস্থা আছে আমরা সেসব গ্রহণ করেছি। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই বাড়িঘর লুটপাট এবং ভাঙচুরের ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। আকস্মিকভাবে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাটি ঘটায়। তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি তাৎক্ষণিকভাবে। এলাকাবাসীর সহায়তায় ৪৫ জনকে ধরা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই গ্রামে কোনো জীবনহানি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তবে সম্পদহানি হয়েছে। বাড়িঘর পুড়িয়েছে।
সোমবার বিকেলে রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ফেসবুকে পোস্ট ও নাশকতার ঘটনায় দুটি মামলা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। যিনি পোস্ট দিয়েছেন, তাকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে। অপরদিকে যারা নাশকতা করেছে, তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে।
১৩ অক্টোবর কুমিল্লার পূজাম-পে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, চাঁদপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন, মন্দির ও ম-পে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। সবশেষ রোববার রাতে কাবা শরিফকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্টের জেরে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন লাগানো হয়।