স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছেছে দেশ। মে মাসের শেষ দিক থেকে দেশে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত সংক্রমণ। লকডাউনসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে সংক্রমণের রাশ কিছুটা টানা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় নিয়ন্ত্রণে আসেনি করোনা। প্রায় দুই মাস ধরে সংক্রমণ হার ২০-২৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ উদ্যোগের ধীরগতিতে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত, বাড়ছে মৃত্যু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং কভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত মে মাসের ২৫ তারিখ থেকেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। এর পরে সংক্রমণ হার ২০-২৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। এটাই দেশে চূড়ান্ত সংক্রমণ। এটাকে বলা হয় ‘প্লাটু পিক’ অর্থাৎ মালভূমি চূড়া। এই ধরনের সংক্রমণ একেবারে অনেক উপরে উঠে নেমে যায় না। বরং দীর্ঘদিন একই সমান্তরালে আক্রান্ত হার চলতে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশনে না নিতে পারলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। লকডাউনের কারণে এক ধাক্কায় সংক্রমণ বাড়েনি ঠিকই কিন্তু এখন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ওপর জোর না দেয়ায় রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে রোগতাত্ত্বিক সপ্তাহ ৩৪ অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা ৩৩তম সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সপ্তাহের (৩২তম) তুলনায় বাংলাদেশে শনাক্ত বেড়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সুস্থতা কমেছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে আক্রান্ত বহাল থাকার হার বেড়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা ব্রিফিং সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ মে দেশে ৪৮টি পরীক্ষাগারে ৫ হাজার ৪০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ১৬৬ জন। শনাক্তের হার ছিলো ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ১ জুন ৫২টি পরীক্ষাগারে ১১ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ জন। ওইদিন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন। করোনা শনাক্তের হার ছিলো ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১ জুলাই ৬৯টি পরীক্ষাগারে ১৭ হাজার ৮৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৫ জন। ওইদিন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ জন এবং মারা গিয়েছিলেন ৬৭২ জন। শনাক্তের হার ছিলো ২১ দশমিক ১২ শতাংশ। ১ আগস্ট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৪টি। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৬ জন। ওইদিন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮৬০ জন। শনাক্তের হার ছিলো ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। গতকাল ৯১টি পরীক্ষাগারে ১৪ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৬৮ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। দেখা যায়, দুই মাস ধরে শনাক্ত হার ২০-২৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশে হঠাৎ করে সংক্রমণ না বাড়ায় ওভাবে পিক পাওয়া যায়নি। ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশগুলোতে যেভাবে হুট করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে পিকে পৌঁছে আবার কমে গেছে এখানে সে রকম হবে না। দেশে করোনা সংক্রমণ দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছুলে লকডাউনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় সংক্রমণ এক ধাক্কায় বাড়তে পারেনি। এই ব্যবস্থায় পিকের মাথা ছেঁটে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রোগী শনাক্ত, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশনে জোর না দেয়ায় এক সমান্তরালে রোগী বাড়ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে প্রতিদিন বাড়তে থাকবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।’