দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১৭৩ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে ঈদের দিন; ছুটির মধ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এক ধাক্কায় ১৪ হাজার কমে যাওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও নেমে এসেছে সাত হাজারের ঘরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রায় ২৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৭ হাজার ৬১৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১৭৩ জনের মৃত্যু হওয়ায় দেশে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ হাজার ৪৯৮ জন হয়েছে। আগের দিন ৩৯ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১ হাজার ৫৭৯ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মৃত্যু হয়েছিল ২০০ জনের। মঙ্গলবার নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ; বুধবার তা বেড়ে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও সংক্রমণের মাত্রা আসলে কমেনি। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৯ হাজার ৭০৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৪৪ জন। এই হিসেবে দেশে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬১ জন। গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ২ হাজার ২৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৮৩ জন। এই দুই বিভাগেই শনাক্ত হয়েছে সারা দেশে মোট শনাক্ত রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশ। আর যে ১৭৩ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৫৮ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৩৮ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১১ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ১৮ জুলাই। তার আগে ১২ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পরে।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ১০ জুন তা ১ হাজার ছাড়ায়। ১৯ জুলাই এক দিনে রেকর্ড ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪১ লাখ ১ হাজারের বেশি মানুষের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৩৯টি ল্যাবে ২৪ হাজার ৯৭৯ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮৮টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যা আগের দিন ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ১ হাজার ৪২৭ জন, ফরিদপুরে ১৮৫ জন, গাজীপুরে ১৯০ জন, মুন্সিগঞ্জে ১১৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৮২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭৯০ জন, কক্সবাজারে ২৪৬, নোয়াখালীতে ১০৪ জন, চাঁদপুরে ১৬৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১১৯ জন এবং কুমিল্লায় ৫৪৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। খুলনা বিভাগের যশোরে ১৫৭ জন, খুলনা জেলায় ১৭২ জন, ঝিনাইদহে ১৬৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২০২ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ। এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৩৪ জন এবং সিলেট জেলায় ২৪১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে। ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৬ জন ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার ১০ জন করে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৩২ জনের মধ্যে ১০ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন, সিলেট বিভাগে ৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। মৃত ১৭৩ জনের মধ্যে ৪৩ জনের বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের কোঠায়; ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৪২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৩৫ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২২ জন মারা গেছেন। তাদের ৯৮ জন ছিলেন পুরুষ, ৭৫ জন ছিলেন নারী। ১৪৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ২২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৫ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজন ও উপসর্গ নিয়ে বেশ ক’জন মারা গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে তা বলা হয়নি।