স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল আরও ২০ জন মারা গেছেন। সব মিলে গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩৪ জন মারা যান। এর মধ্যে খুলনায় চারজন, বরিশালে একজন, কুমিল্লায় ছয়জন, লক্ষ্মীপুরে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, নোয়াখালীতে একজন, ফেনীতে একজন, ঝালকাঠিতে দুজন ও খুলনায় তিনজন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলে ১৪ জনের মৃত্যু: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তারা হলেন মো. ওসমান আলী (৭০), নুরুল আলম (৬২) চকবাজার; আবু বক্কর (৭৫) মিরপুর; মর্জিনা (৪২) মতলব, চাঁদপুর; মোমেনা (৬৫) ডেমরা, ঢাকা; রহিমা বেগম (৫৮), আকলিমা (৪৫), আনোয়ার হোসেন (৪৫) মুন্সীগঞ্জ; গোপাল চন্দ্র (৮৩), শামসুল আলম (৪৮) নোয়াখালী; আবদুল মজিদ খান (৬৬) বরিশাল; আল আমিন (১৮) যশোর; আক্কাস (৭৫) নরসিংদী এবং এসআই বজলুর রহমান (৪০) কোতোয়ালি থানা, ঢাকা।
জেলায় জেলায় ২০ মৃত্যু: আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী খুলনায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন খুলনা মহানগরীর বাবু খান রোডের পান্না ওয়াজেদ (৭০), টুটপাড়ার মহাসিন খোকন (৫৫); নড়াইলের মহেশখোলা গ্রামের কাশেম শেখ (৩৬) ও খুলনার শিরোমণি কুয়েট মোড়ের মরিয়ম বেগম (৫৬)। করোনা উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ৬১ জনের মৃত্যু হলো। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারী (৪০) রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। ঝালকাঠি সদরের কেফায়েতনগরের বাসিন্দা ওই নারীকে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোববার রাত ৯টায় এ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। তার নমুনা রিপোর্ট এখনো হাতে পাননি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গে মারা যান চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার দেবীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৮৫), করোনা ওয়ার্ডে মারা যান নগরীর ঠাকুরপাড়ার পুষ্পা রানী মজুমদার (৬৫), আইসিইউতে মারা যান চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার অরুণ চন্দ্র (৮০), কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুরের আবদুল মান্নান (১০৬), ব্রাহ্মণপাড়ার আবদুল আজিজ (৩৪) ও দেবিদ্বারের মনিরুল ইসলাম (৭০)। লক্ষ্মীপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন মারা গেছেন। সোমবার রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পিডিবি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুর শাখার উচ্চমান সহকারী। রাতেই তার লাশ স্থানীয় বাঞ্ছানগরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে হাসপাতাল ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আলম মিয়া (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের শিমরাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম অনাথবন্ধু শীল (৬৫)। সোমবার রাত ৯টার দিকে হাতিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওছখালি কালীবাড়িতে তিনি মারা যান।
তিনি ওছখালি বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী ছিলেন। ফেনীর সোনাগাজীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে ফেনী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তার নাম নজরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী এলাকার বাসিন্দা। ঝালকাঠিতে সর্দি, কাশি ও বুকে ব্যথা নিয়ে গতকাল সকালে মুক্তিযোদ্ধাসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মোয়াজ্জেম হোসেন পাটোয়ারী (৬৭) ও রেণু বেগম (৪০)। মোয়াজ্জেম শহরের পূর্ব চাঁদকাঠির বাসায় মারা যান। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মচারী। এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি ও বুকের ব্যথায় ভুগছিলেন। রেণু বেগম কাঁঠালিয়া উপজেলার জয়খালী গ্রামের গৃহবধূ। তার আট দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিলো।