সরকারের কাজ নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তারা কতো জনকে সাহায্য করেছেন
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিরোধী দলগুলোর যারা সমালোচনা করছেন, মহামারীর মধ্যে তারা কতজনকে সাহায্য করেছেন, সেই হিসাব পত্রিকায় দিন। যারা প্রতিদিন বক্তৃতা-বিবৃতি বা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছেন, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা? কয়জন দুর্গত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন? কয়জন মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছেন? কয়জন মানুষের কাফনের কাপড় তুলে দিয়েছেন? কেউ নেই। তিনি বলেন, আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন তারা ঘরে বসে বসে বিবৃতিই দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যখন তাদের বুদ্ধি খোলে কিংবা পরামর্শ দেন, তার আগেই কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মোবাইল ফোন সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৬ লাখ পরিবারের মধ্যে নগদ সহায়তা বিতরণ করেন। সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
নগদ সহায়তা বিতরণ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম, ভোলা এবং জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি পরিবার এ মহামারীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঈদ উপহার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাচ্ছে, যার জন্য ৯১২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সর্বদা দেশের জনগণের পাশে থাকে। সেটা ক্ষমতায় বা বিরোধী দল যে অবস্থানেই থাকুক না কেন। আমরা সবসময় চিন্তা করি- কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবো, মানুষকে সহযোগিতা করবো। আওয়ামী লীগ তার (জাতির পিতার) পদাঙ্ক অনুসরণ করেই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে আছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার পাশাপাশি দলীয়ভাবেও মানুষের পাশে আছি। তিনি বলেন, করোনায় কৃষকের ধান কাটার সমস্যা ছিলো। আমি বলার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ মানুষের ধান কেটে দিয়েছে। এভাবে সব দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে।
দুর্যোগে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে কেবল সমালোচনার স্বার্থেই সরকারের ঢালাও সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে এদিনের ভাষণে তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা করোনাকালীন সরকারের কাজ নিয়ে সমালোচনা করছেন, সরকার এটা করেনি, সেটা করেনি, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- নিজে কয়টা লোককে সহায়তা করেছেন সেই হিসাবটা পত্রিকায় দিয়ে দিন। তা হলে মানুষ আস্থা পাবে, বিশ^াস পাবে। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তিনি তার সরকারের অনুদানের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানসহ সবাইকে দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।
করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, ভিড় এড়িয়ে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে অনুসরণে জনগণের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা ভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশা ও ভ্যানচালক, মোটরশ্রমিকসহ কর্মহীন বিভিন্ন পেশার ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী তিন দিনের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিউরক্যাশের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পার্সন) ভিত্তিতে ২ হাজার ৫শ টাকা করে পৌঁছে যাবে এসব পরিবারের কাছে।
এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ কৃষক পরিবারের মোবাইল ফোনে এই সাহায্য পৌঁছে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর করোনা মহামারীর কারণে যেসব নিম্নআয়ের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মহীন হয়ে পড়েছিল, তাদের সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিলো। ২০২০ সালে করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্নআয়ের পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে ৮৮০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই অর্থ দেয়া হয়েছিলো।
সরকার বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শের জন্য বসে না থেকে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, এই দেশটা আমাদের। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। রাজনীতি আমাদের জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য। এই কথাটা আমরা ভুলি না।’ শক্তিশালী বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী, দল অথবা যারাই আছেন, প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবেন সেই চিন্তা-ভাবনা করেন, তাদের এটা করতে হলে বা শক্তিশালী বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।