সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা
স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে। নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। গণতন্ত্র আরও সুসংহত হয়েছে। এ বিজয়টা আমার নয়, জনগণের বিজয়। আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা।’ গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্য দলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের সরকার গঠন করার অধিকার ও ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত ও শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশি সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের এই নির্বাচনে কৌতূহল ছিলো ভোটার উপস্থিতি কেমন হয়। ভোটের দিন দেখা যায়, যে সব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, সেগুলোতে ভোটের হার তুলনামূলক বেশি, আর যে সব আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো না, সেগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানায়। ভোট পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিরা এখন পর্যন্ত নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি। বরং তাদের পক্ষ থেকে যে সব বক্তব্য এসেছে তাতে আওয়ামী লীগ বেশ আনন্দিতই। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করেছি : ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিলো নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থাকে সংস্কার করেছি। নির্বাচন চলাকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা— সেটাই লক্ষ্য ছিল।’ এবারের নির্বাচনটাকে ‘ব্যতিক্রমী’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণত আমরা দলের প্রার্থী ঠিক করে দেই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যার ইচ্ছামতো দাঁড়াতে পারবে।’ বিএনপির ভোট বর্জন নিয়ে তিনি বলেন, ‘দলটি সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি। তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের।’ নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। গেজেটের পর শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরিটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবে তিনিই হবে সংসদীয় দলের নেতা। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করতে চাচ্ছি।’ ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পা রাখবে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্ডাস্ট্রির ফোর্থ রেভল্যুশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে বলেন। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইনের মামলায় ড. ইউনূসের সাজা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখানে সরকারের করার কিছু নেই।