আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট যন্ত্রটি পরিচালনায় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে কারিগরি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। যদিও ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক রয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি করোনার কারণে সেই প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়লেও থেমে নেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে কমিশনের হাতে দেড় লাখের মতো ইভিএম আছে। আরো ৩৫ হাজার ইভিএম দ্রুত ক্রয় করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদের ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রে প্রায় দেড় লাখের মতো ইভিএম লাগবে। ফলে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির ঘাটতি না থাকলেও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বরাবরই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ঢাকার একটি পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলেন, সকল সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি রেখে যাবো। যদিও করোনার কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ৩শ আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতার বিষয়ে সিইসি বলেন, আমরা সব আসনে ইভিএমে ভোট করতে পারবো কিনা-সেই সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এইটুকু বলা যায় আমাদের এখন যে প্রস্তুতি তাতে অর্ধেক আসনে ভোট করা যাবে। সামনে যে সময় আছে তাতে আশা করছি সব আসনে ভোট করা যাবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামীতে সব নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে ৩শ আসনে ভোট করা কঠিন হয়ে যাবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি আসনে এই ভোটযন্ত্রে ভোট গ্রহণ করে কিছুটা সফলতা পায় ইসি। এরপর উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবহারে যায় ইসি। মাঝে বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন, সিটি নির্বাচনেও ইভিএমে ভোট নেয়া হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় ইসির ইভিএম প্রকল্পর পরিচালক জানান, প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়েছে (মূলত এগুলো একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই কেনা হয়েছিল)। সেগুলোর মধ্যে ৮২ হাজার মেশিন মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়েছে। ৩৪ হাজার ইভিএম মেশিন তাদের কাছে রয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) আরো ৩৪ হাজার মেশিন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে, ভোট যন্ত্রটি পরিচালনায় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে কারিগরি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সম্পত্তি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসি সচিব স্বাক্ষরিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও স্কুল-কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্যমে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রস্তুত করা হবে।
এর আগে ২০২০ সালের জুনেও কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে সেখানে কারিগরি শিক্ষকরা ছিলেন না। স্কুল-কলেজের আইসিটি শিক্ষকদের মধ্যে যারা দক্ষ, প্রতি উপজেলায় এমন ১০ জন করে মোট ৫ হাজার ১৯০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় যেটা হয়েছিল, সেটা খুব সীমিত আকারে। এছাড়া সেটাতে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষকরাও ছিলেন না। বর্তমানে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটা ব্যাপক আকারে করা হবে। ২০১০ সালের ১৭ জুন দেশে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রচলন শুরু করে বিগত ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ১২শ ইভিএম তৈরি করে নেয়। ওই কমিশন এই যন্ত্রে ভোট নিয়ে সফলও হয়। পরবর্তীকালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ২০১৫ সালের ১৫জুন ভোট নিতে গেলে একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সে মেশিনটি পরে আর ঠিক করতে পারেনি কমিশন। ফলে ওই মেশিনগুলো নষ্ট করে নতুন করে আরও উন্নত প্রযুক্তি ইভিএম তৈরির করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কেএম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় ২ লাখ ২০ হাজার করে ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে। এজন্য হাতে নেওয়া হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।