দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত : দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ
স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় অশনি প্রবল শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আসার সম্ভাবনা নেই। এটি প্রথমে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে প্রবেশ করবে। পরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আসতে পারে। ইতোমধ্যেই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে গেছে। শক্তিশালী অবস্থাতেই এটা ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের ঠা-া পানি স্পর্শ করার সাথে সাথে শক্তি হারিয়ে অনেকটাই দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূলের পানি তুলনামূলক বেশি ঠা-া। ঠা-া পানিতে ঘূর্ণিঝড় তার শক্তি হারিয়ে ফেলে। পরে গতিপথ পরিবর্তন করে দুর্বল অবস্থায় উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তখন অবশ্য তা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ক্যাটাগরি থেকে নেমে সাধারণ ঝড়ে পরিণত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অশনির প্রভাবে বাংলাদেশ উপকূলে প্রবল বর্ষণ হবে এবং একই সাথে জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে উপকূলের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। বাংলাদেশের চার সমুদ্র বন্দরের জন্য ২ নম্বর দুরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারি করা হয়েছে।
কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল বলেছেন, বুধবার ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যা উপকূল থেকে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকবে। উড়িষ্যা উপকূলের পানিতে ঘূর্ণিঝড় অশনি পড়ার সাথে সাথেই ঠা-া পানির স্পর্শে এটা সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তখন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ নেমে যাবে ৬৫ কিলোমিটারে। অপর দিকে বাংলাদেশের নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে আসতে আসতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি নেমে যাবে ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটারে। তখন এটা হবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড়। অর্থাৎ গভীর নিম্নচাপ অথবা নিম্নচাপ কেন্দ্রে বাতাসের যে গতি থাকবে তখন সে রকম গতি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তখন চাঁদের পূর্ণিমা অবস্থা থাকার কারণে সূর্য ও চাঁদের মিলিত সমুদ্রে পানি বেশি ফুলে উঠবে। ফলে বাংলাদেশ উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে। মোস্তফা কামাল বলেন, সে সময় ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় বরিশাল ও নোয়াখালী অঞ্চলের উপকূলে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামীকাল বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে শনিবার পর্যন্ত। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তা ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে নয়, এটা স্থানীয় কারণে। বাংলাদেশে কালবৈশাখীর কারণে এখনকার বৃষ্টিটা হচ্ছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় অশনি গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অফিস উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সারা দেশে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসংিহ, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।