স্টাফ রিপোর্টার: কাতার বিশ্বকাপে ৯৭৪টি শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল স্টেডিয়াম। নাইন সেভেন ফোর নামের সেই স্টেডিয়াম এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সরিয়ে নেওয়ার কথা উরুগুয়েতে। বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামগুলোর গ্যালারিতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। সেসবও কমানোর কাজ শুরু হবে শিগগিরই। গতকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল বিদায় ঘণ্টা। ফুটবলপ্রেমীদের মনে বাজছিল বিদায়ের সুর। কাতারের রাজধানী দোহায় ছুটে আসা বিশ্বকাপের দর্শকরা গত কয়েকদিন কাতারের দর্শনীয় স্থানগুলোতে গিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল মরুভূমি ভ্রমণ (ডেসার্ট সাফারি)। কাতারের মানুষ মরুভূমির পাহাড়গুলোকে জঙ্গল বলে থাকে।
কোথায় যাচ্ছ, জিজ্ঞেস করলে বলে জঙ্গল দেখতে যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমাদের চেনা কোনো জঙ্গল চোখে পড়ে না। বালির পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। এই পাহাড়ের সারিই ওদের কাছে জঙ্গল। এখানে কোনো গাছপালা নেই। সেসব পাহাড় ডিঙানোর জন্য বিশেষ গাড়ির প্রয়োজন। সেই গাড়ির চাকাগুলো হাওয়ায় পূর্ণ থাকলে হয় না। কিছুটা খালি করে নিতে হয়। নাহলে মরুভূমির বালিতে গাড়ি চালানো অসম্ভব। মরুভূমিতে ভ্রমণ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাই করেছে কাতার। আরব সাগরের তীরবর্তী আল শাকরা মরুভূমি। সাগরের তীরবর্তী এলাকায় নানা আয়োজন। বেদুইন সংস্কৃতির পূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় এখানে গেলে। নির্দিষ্ট এলাকায় টানানো থাকে খিমা। চারপাশে বেষ্টনি। মরুভূমির কনকনে ঠা া বাতাস থেকে আড়াল করা থাকে পুরো এলাকা। সেখানে চলে বারবিকিউ পার্টি। মরুভূমি ভ্রমণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিকটা হলো, বালির পাহাড় ডিঙিয়ে এগিয়ে চলা। ছোটো বড় পাহাড় ডিঙানোর সময় মনে হয় এই বুঝি উল্টে গেল গাড়ি। বালির সমুদ্রে হারিয়ে গেল! তবে ড্রাইভারদের দক্ষতায় ঠিক পথেই ছুটতে থাকে গাড়ি। সন্ধ্যা গড়িয়ে যেতেই আকাশের গায়ে জ্বলতে থাকে অসংখ্য তারা। সেসব দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। কেবল মরুভূমি ভ্রমণই নয়, আরব সাগরে নৌকাবিলাসেও মত্ত ছিল বিশ্বকাপের দর্শকরা। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই তারা ছুটে গিয়েছে সমুদ্রে। ক্রুজ শিপ নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছে। সেখানে বিকালের সূর্যের আলো ছড়িয়ে তৈরি করে নানা রঙের ঢেউ। এক সময় দিনের ক্লান্ত সূর্য হারিয়ে যায় আরব সাগরে। এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকরা।
গত ২০ নভেম্বর কাতারে শুরু হয় ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ। ৩২ দল অংশ নেয় সেই যুদ্ধে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর টিকে ছিল কেবল দুটো দল। আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। ফাইনালের উত্তাপ কাতারের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। তবে সেই সঙ্গে ফুটবলপ্রেমীদের মনের গহিনে বাজতে শুরু করে বিদায়ের সুর। আবারও চার বছরের অপেক্ষা। একটি বিশ্বকাপ দেখার জন্য কত প্রস্তুতিই না থাকে ফুটবলপ্রেমীদের। জার্সি কেনা, নিজ নিজ দলের পতাকা কেনা, অনেকেই নতুন টিভি কেনেন। আরও কত কী আয়োজন! বিশেষ খাবারেরও ব্যবস্থা থাকে। কাতার বিশ্বকাপে এমন অনেকের দেখা মিলেছে, যারা চাকরিটাও ছেড়ে এসেছেন বিশ্বকাপের জন্য। ফুটবল বিশ্বকাপ মানে ভালোবাসা, আবেগ, গৌরব, হাসি, কান্না আরও অনেক কিছু। সবকিছু শেষ করে বিশ্বকাপ বিদায় নিচ্ছে কাতার থেকে। এরপর আরও চার বছরের অপেক্ষা। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় দেখা যাবে ৪৮ দলের লড়াই। নতুন ফরম্যাটের সেই বিশ্বকাপ কতোটা আকর্ষণীয় হবে এখনই বলা কঠিন।