জীবননগর ব্যুরো: উদ্বোধন আর পরিদর্শনের জালে আটকিয়ে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দল। উদ্বোধনের পর ৮ বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে কত শত বার পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ কিন্তু স্থলবন্দরটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আশায় বুক বাধা এ উপজেলাবাসী চরম ক্ষুদ্ধ ও হতাশ।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলৎগঞ্জ- মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিলো। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় রাজস্ববোর্ড ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আবারো বন্ধ হয়ে যায় শুল্ক স্টেশন। ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনরায় শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করেন। বন্দরটিকে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, জীবননগর উপজেলার সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন দৌলৎগঞ্জ (বাংলাদেশ) ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন মাজদিয়া (ভারত) অংশে স্থলবন্দরটি অবস্থিত। উভয়দেশের সীমান্ত পর্যন্ত চওড়া পাকা রাস্তা রয়েছে। বন্দরটি চালু হলে আমদানি-রপ্তানি কাজে পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় ও দ্রুত সময়ে পণ্য পরিবহন সম্ভব। দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুতের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ অবস্থার মধ্যে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই নৌ-পরিবহন মন্ত্রালয় শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেন। একই বছর ২৪ আগস্ট তৎকালীন নৌ- পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ৪ জুন তিনি (তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান) ও তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দর পরিদর্শন শেষে দ্রুত সময়ে চালুর ঘোষণা করেন। দীর্ঘ আট বছর পার হলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি স্থলবন্দর।
দৌলৎগঞ্জ সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক বলেন, দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সকল সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দুরত্ব ৩৪ কিঃ মিঃ। ঢাকার সাথে দূরত্ব ২৪০ কিঃ মিঃ। তাছাড়া ভারতীয় অংশে টুঙ্গি থেকে কৃষ্ণনগর ৩৪ জাতীয় মহাসড়ক থেকে সকল স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব। জাতীয় সড়ক থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের যে দূরত্ব তার থেকে অনেক কম দুরত্ব অর্থাৎ ২৫ কিঃ মিঃ দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর। যার কারনে ভারতের সাথে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি ও পরিবহন খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে।
দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল জানান, যশোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় বন্দরে তিন একর জমিতে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। প্রথমদিকে ২০০ গাড়ির মালামাল লোড-আনলোড করা সম্ভব। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতায় ৩০ ফুট চওড়া রাস্তাসহ জীবননগর পর্যন্ত ২০ ফুট চওড়ার ৬ কিলোমিটার রাস্তা যোগাযোগের উপযোগী। এছাড়াও বন্দর এলাকায় আরও ৪০.৪৮ একর জমি সহজলোভ্য দামে অধিগ্রহণ করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, ইন্দো-বাংলা চেম্বারের সভাপতি ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহম্মেদ বন্দরটি পরিদর্শনে এসে গাড়ি আমদানিতে ১৫ লিটার জ্বালানি সাশ্রয় হবে বলে জানান। যশোর কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার নাহিদ নওশাদ মুকুল জানান, ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ মিটিংয়ে স্থলবন্দরগুলো নিয়ে যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরসহ দেশের অন্যান্য বন্দর পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়। করোনা সংক্রমণের কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে অতি সম্প্রতি এনবিআরের একটি দল স্থলবন্দরটি পরিদর্শন করেছেন।