দামুড়হুদা উপজেলায় আরও চারজনসহ মোট করোনা শনাক্ত ১০৭

মৃত্যুর হিসেবে এগিয়ে থাকা দর্শনায় সংক্রমণও বেশি

মাহফুজ মামুন: কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ব্যর্থ হচ্ছে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও। সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা কঠিন হচ্ছে দর্শনা পৌর এলাকায়। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত দর্শনা পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে লকডাউন করে কিছুদিনের জন্য পরিস্থিতি ভালো থাকলেও আবার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে করোনা পরীক্ষা করালে প্রতিরোধ সম্ভব। নয়তো অবস্থা আর ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১০৭ জন নারী ও পুরুষ। এর মধ্যে দর্শনা পৌর এলাকায়ই করোনা পজিটিভ হয়েছেন ৬১ জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ জন। দামুড়হুদা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৪৩ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে এখনও ৩৪ জন রোগী হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে কুড়ুলগাছি ও নাটুদা ইউনিয়ানে এখনও পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি।

জানা যায়, জুলাই মাসের ১৫ দিনে দর্শনা পৌর এলাকায় ২৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ এলাকার মানুষেরও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা বেশি। মাস্ক ব্যবহার মানুষের মাঝে তেমন একটা চোখে পড়ে না। আর সময় অসময়ে অযথা বাইরে ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতাও ব্যাপক। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশি ও অন্যস্থানের মানুষগুলো সংক্রমিত হচ্ছে। আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসার কারণে ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিলেও মানুষের অবহেলার কারণে তা কাজে আসছে না।

দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৬১ জন। সুস্থ হয়েছেন এখনও পর্যন্ত ৩৪ জন। গতকাল কলেজপাড়ায় ২ জন এবং ইসলামবাজার এলাকায় একজনের শনাক্ত হয়। এছাড়াও ১নং ওয়ার্ডে আক্রান্ত ৫ জন হলেও সুস্থ হয়েছে ৩ জন। মারা গেছেন একজন। ২নং ওয়ার্ডে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়েছে ৮ জন। মারা গেছেন একজন। ৩নং ওয়ার্ডে ২ জন আক্রান্ত হয়েছে নতুন। ৪নং ওয়ার্ডে এখনও পর্যন্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ৫নং ওয়ার্ডে ৫ জন আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়েছেন ৪ জন। ৬নং ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাস মুক্ত রয়েছে। ৭নং ওয়ার্ডে ২৫ জন করোনা আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়েছে ১৯ জন। ৮নং ওয়ার্ডে নতুন করে ৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়েছে। আর ৯নং ওয়ার্ডে করোনা রোগী শূন্য রয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪৩ জন করোনা পজিটিভ হয়েছে। জুড়ানপুর ইউনিয়নে ৩, নতিপোতা ইউনিয়নে ৭, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে ৩, মদনা ইউনিয়নে একজন,  হাউলি ইউনিয়নে ৫ জন। দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নে ২৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। কুড়ালগাছি ও নাটুদা ইউনিয়নে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া গ্রামগুলো- কলাবাড়ি, লোকনাথপুর, নাপিতখালি, উজিরপুর, ফকিরপাড়া, ভগিরতপুর, পুরাতন হাউলি, চিৎলা, দর্শনা থানা, মোহাম্মদপুর, জিরাট, পরানপুর, দলিয়ারপুর, দামুড়হুদা থানা, নতিপোতা, দর্শনা বাসস্ট্যান্ড পাড়া, দুলালনগর পুলিশ ক্যাম্প, মোবারকপাড়া, দক্ষিণ চাঁদপুর, দশমিপাড়া, জয়রামপুর, মজলিসপুর, কার্পাসডাঙ্গা, কেরু বাজার মাঠপাড়া, কেরু করপেরেশন লাইন, দর্শনা কেরুপাড়া, রামনগর, দর্শনা আশা অফিস, দর্শনা শ্যামপুর, কেরু অফিসার্স মেস, কেরু কোয়াটার, ইসলাম বাজার দর্শনা, পুরাতন বাজার দামুড়হুদা।

দর্শনা পৌর এলাকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১, ২ ও ৮নং ওয়ার্ডে তিন জন মারা গেছেন। দর্শনা পৌর এলাকার শ্যামপুর গ্রামের ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে কাওছার আলী শাহ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দর্শনা বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সোলাইমান আলী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দর্শনা ও দামুড়হুদা থানায় দায়িত্ব পালনের সময় ওসি, ওসি তদন্ত, এসআই, এএসআই ও কনেস্টেবল করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত দামুড়হুদা থানার ৭ জন ও দর্শনা থানার জনের সকলেই সুস্থ হয়েছেন।

দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান জানান, কিছু আগে দর্শনার অবস্থা বেশ ভয়াবহ ছিলো। এখনও নতুন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে ২১ জন। মানুষ করোনা সম্পর্কে উদাসীন। সবাইকে এতো বোঝানোর পর কথা শোনে না। আমার পরিবারের একজন আক্রান্ত হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মো: জামাল বলেন, দর্শনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না কোন ভাবেই। এখানে সামাজিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দামুড়হুদা উপজেলার ইউনিয়নে রোগী কম। মানুষকে নিজে থেকে সচেতন হতে হবে। কাউকে বলে সচেতন করা যায় না। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, দামুড়হুদা উপজেলার করোনা পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। রোগী শনাক্ত হওয়া বাড়িগুলো লকডাউন করা হচ্ছে। লকডাউন করা বাড়িগুলো খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। যাদের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। হাটের দিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। আর দর্শনায় রোগী বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে।

 

Comments (0)
Add Comment