স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বের করে দেয়ায় জেলাজুড়ে ধর্মঘট শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স মালিকেরা। গতকাল বুধবার সকালে সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ডেকে হাসপাতাল চত্বর থেকে বের হতে বলেন। এরপরই জেলাজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেন মালিকরা। রাত ১০টার দিকে সদর থানার ওসির হস্তক্ষেপে ধর্মঘট তুলে নেন তারা। এদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় যাওয়ার অনুমতি না থাকায় রেফার্ড রোগীর স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স এর জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। এমনকি কোনো প্রাইভেট কার এবং মাইক্রোবাসেও রোগীদের নিয়ে যেতে বাধা দেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা। কয়েকজন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের হাসপাতালের সমাজসেবা অফিসে মাসিক ৩০০ টাকা করে দিতে হবে। সেই টাকা গরিব দুস্থদের ওষুধ ও যাবতীয় চিকিৎসার কাজে ব্যয় করা হয়। গতকাল সকালে হাসপাতাল চত্বরে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিজ কক্ষে ডেকে পাঠান আরএমও। ২/৩ জন মাসিক টাকা না দেয়ায় আরএমও সব অ্যাম্বুলেন্স চালকদের হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ২/৩ জন ব্যতিত আমরা প্রতিমাসে টাকা পরিশোধ করে আসছি। যারা দেয়নি তাদের মধ্যে কোনো গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার শিকারসহ মালিকানা পরিবর্তন এর কারণে টাকা দিতে পারেনি। এর জন্য সবাইকে কেন থাকতে দিবে না? এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টা থেকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কোনো রোগীকে আমরা সেবা দিইনি। রাত ১০টার দিকে সদর থানার ওসি থানায় ডাকেন আমাদের। উনার আশ্বাসে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তারা আরও বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকাতে যায় না, এসি নাই। আমাদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় যায় আবার এসিও আছে। রোগীরা বেশিরভাগ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে থাকেন। এ কারণে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ। এদিকে গতকাল রাত ৮টার দিকে কামরুল হক নামের এক ব্যক্তি বলেন, গতকাল সকালে আমার মা সদর ব্রেন স্টোক করলে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল বিকেল থেকে মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসক ঢাকায় নিতে বলেছেন। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘট করার কারণে ভোগান্তিতে পড়ি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে বিস্তারিত জানানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েছি বিষয়টি। তারা কোন রেসপন্স দেয়নি এবং কোন সহযোগিতাও করেননি। তারা জানিয়েছেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স না গেলে আমাদের কিছু করার নেই। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় যাবেনা। চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-মিনিবাস, মাইক্রোকার সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন ম-ল বলেন, বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকদের নিয়ে ওসির বৈঠক হয়। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়েছি বেসরকারি অ্যাম্বলেন্সগুলোর সমাজসেবা অফিসের যে টাকা বাকি আছে সেটা নিজে দায়িত্ব করে পরিশোধ করাবো তাদের গাড়িগুলো সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে সিরিয়াল করা হবে। কাল সকালেই সবাই কাগজপাতিজমা দেবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স স্টান্ডে অ্যাম্বুলেন্স রাখতে বেশকিছু শর্ত দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মালিক ও চালকরা সেগুলোতে রাজি হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা ধর্মঘট বাতিল করেছে। সবকিছু এখন স্বাভাবিক। এ বিষয়ে জানতে সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, নিয়ম অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা সমাজসেবার মাধ্যমে আবেদন করবেন। সমাজসেবা হাসপাতালে একটি তালিকা পাঠাবে। সেই তালিকানুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স প্রতি মাসিক ৩শ’ টাকা হারে ভাড়ার ভিত্তিতে আমরা অ্যাম্বুলেন্স রাখার অনুমোদন দেবো। গত এক বছরের কোনো আপডেট তথ্য নেই আমাদের কাছে। তাছাড়া এক বছরের মধ্যে কেউ ভাড়া পরিশোধ করেননি। এ কারণে তাদের গাড়ি রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো অ্যাম্বুলেন্স যদি অবৈধ্য মালামাল বহন করলে তার দায়ভার কে নেবে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহব্বুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, হাসপাতালে সমাজসেবা অফিসে প্রতিদিন ১০ টাকা করে মাসিক ৩শ’ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা দিতোনা। বিষয়টি তাদের ডেকে সমাধান করা হয়েছে। এখন থেকে নিয়ম অনুযায়ী তারা টাকা পরিশোধ করবেন।