মন্দিরে মন্দিরে ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড় : আজ মহাসপ্তমী
স্টাফ রিপোর্টার: দেবী দুর্গার বোধনের মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার শুরু হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় পার্বণ শারদীয় দুর্গোৎসব। আজ থেকে সাড়ম্বরের মাত্রাটা বাড়বে। ম-পে ম-পে ঢাকের বোলে যেন ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের হৃদয়তন্ত্রিতে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার। শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য। দেশের হাজার হাজার পূজাম-প এখন উৎসবে মাতোয়ারা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দল বেঁধে পূজা দেখতে যাচ্ছে। বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের গতকাল ছিলো মহাষষ্টী। আজ মহাসপ্তমী। আজ শুরু হচ্ছে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মূলত দুর্গোৎসবের মূল পর্বও শুরু হচ্ছে আজ। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। সপ্তমী পূজা উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজাম-পে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে সপ্তমীতে পূর্বাহ্ন ৯-৫৭ মধ্যে নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ এবং সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্ত।
বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে চুয়াডাঙ্গার মৃত্তিকা প্রতিমাগুলি। এবার দেবীর ঘোটকে আগমন, দোলায় গমন করবেন। গতকাল সোমবার সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) দুর্গোতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয়েছে। আগামী শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। মন্দির ও ম-পে বোধনের ঘট স্থাপন করা হয়েছে। এবারও চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার শহরের ও গ্রামে গ্রামে ম-পে আর মন্দিরে মৃৎশিল্পীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে গড়ে তুলেছেন দর্শনীয় প্রতিমা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার সর্বমোট ১১৭টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে সদর থানার মধ্যে ২৪টি, দামুড়হুদা মডেল থানার মধ্যে ১৪টি, আলমডাঙ্গা থানার মধ্যে ৩৮টি, জীবননগর থানার মধ্যে ২৩টি ও দর্শনা থানার মধ্যে ১৮টি পূজাম-প রয়েছে। তিথির কারণে একইদিনে ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টা বাজিয়ে ষষ্টী পূজা হয়েছে। সকালে মহাষষ্টী পূজা চলাকালে ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা ও শাখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পূজাম-পগুলো। আনুষ্ঠানিক পূজার প্রথম দিনেই দেবী দুর্গার আগমনে ভক্তকূলকে উচ্ছসিত দেখা গেছে। সন্ধ্যা নামতেই মন্দিরগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে।
পঞ্জিকা মতে, গত ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মহাষষ্টীর পর আজ মঙ্গলবার মহাসপ্তমী, ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১৪ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৫ অক্টোবর মহাদশমী পূজা হবে। আজ মঙ্গলবার মহাসপ্তমীর দিনে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা হবে। আগামী বুধবার মহাঅষ্টমীর দিনে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর অষ্টমাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হবে।
পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবার আয়োজন গত বছরের থেকে বড়। নারীরা এই আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে, সেটা বিবেচনায় রেখে অঞ্জলি প্রদানের পর্ব আলাদা আলাদা গ্রুপে করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানান।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলায় মোট ৪২টি মন্দিরে একযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে ঢাকে বাড়ি দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। এ বছর মেহেরপুর শহরে পাঁচটি পূজাম-পে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। এগুলো হলো- মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমন্দির, মেহেরপুর শ্রী শ্রী হরি ভক্তি প্রদায়িনী পূজাম-প, নায়েব বাড়ি মন্দির, মালোপাড়া বকুলতলা মন্দির, হালদারপাড়া হরিজন মন্দির। এছাড়াও বামনপাড়া পূজামন্দির, গোভিপুর দাসপাড়া পূজামন্দির, চাঁদবিল রাধে শ্যামপূজা মন্দির, আমঝুপি শ্রীশ্রী রাধা মাধব সার্বজনীন পূজামন্দির, পিরোজপুর ঘোষপাড়া পূজামন্দির, পিরোজপুর দাসপাড়া পূজামন্দির, মোমিনপুর পূজামন্দির, গহরপুর দুর্গামন্দির।
মুজিবনগর উপজেলায় মোনাখালী দুর্গা মন্দির, বাবুপুর দুর্গা মন্দির, বল্লভপুর দুর্গা মন্দির, দারিয়াপুর দুর্গা মন্দির, মহাজনপুর দুর্গা মন্দির, বল্লভপুর দুর্গা মন্দির ও কোমরপুর দুর্গা মন্দির। গাংনী উপজেলায় গাংনী কেন্দ্রীয় মন্দির, গাংনী কেন্দ্রীয় রাম মন্দির, চৌগাছা দাসপাড়া কালিমন্দির, গাড়াডোব দাসপাড়া কালিমন্দির, কঁচুইখালী জুগিন্দা দুর্গামন্দির, হাড়িয়াদহ দাসপাড়া কালিমন্দির, রায়পুর দাসপাড়া কালিমন্দির, আমতলী কালিমন্দির, আমতলী দুর্গামন্দির, ষোলটাকা কর্মকারপাড়া দুর্গামন্দির, ষোলটাকা দাসপাড়া কালিমন্দির, মটমুড়া কালিমন্দির, বেতবাড়িয়া দাসপাড়া মন্দির, ভোমরদাহ দাসপাড়া কালিমন্দির, হিজলবাড়িয়া দাসপাড়া কালিমন্দির, কসবা দাসপাড়া কালিমন্দির, মোহাম্মদপুর দাসপাড়া কালিমন্দির, ভোলাডাঙ্গা দাসপাড়া কালিমন্দির, নিত্যানন্দপুর দুর্গা মন্দির, বাউট কালিমন্দির, চাঁদপুর দাসপাড়া শিবমন্দির ও বামন্দী কোলপাড়া পূজামন্দির। উল্লেখ্য, করোনা সতর্কতার পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপ নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।