লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবার কাছা বেঁধে মাঠে নেমেছেন মিল কর্তৃপক্ষ

কেরুজ চিনিকলের ২০২২-২৩ আখ রোপণ মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

দর্শনা অফিস: ঐতিহ্যবাহী কেরুজ চিনিকল দীর্ঘদিন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও সম্প্রতি শুরু হয়েছে আধুনিকায়নের কাজ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটিতে যখন যৌবনের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে, ঠিক তখনি আখচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে চাষিকূল। রোপণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হাসির খোরাকে পরিণত হচ্ছে বারবার। রোপণ কার্যক্রম পড়ছে মুখ থুবড়ে। যে কারণে আখ মাড়াই মরসুম হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এরই মধ্যে চিনিকলটিকে ঘুরে দাঁড়াতে কর্তৃপক্ষ নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ২০২২-২৩ ইক্ষু রোপণ মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সকাল থেকেই চিনিকলের পূর্ব-পশ্চিম সাবজোন এলাকার প্রায় প্রতিটি ইউনিটে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন উপস্থিত থেকে রোপণ মরসুমের উদ্বোধন করেন। সেই সাথে গতকালই চিনিকলের ৭৮টি ইউনিটে আধুনিক পদ্ধতিতে এবার ইক্ষু রোপণ মরসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই। এ মরসুমে ৭ হাজার একর জমিতে ইক্ষু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমি ১৪৫০ ও কৃষকের জমির পরিমাণ ৫৫৫০ একর। ইক্ষু রোপণকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ শাহাব উদ্দিন, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) ফিদাহ হাসান বাদশা, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন কুমার সাহা, ব্যবস্থাপক (মিলস ফার্ম) রওশানারা আরজু প্রমুখ। দীর্ঘ মেয়াদী আখচাষ লাভজনক না হওয়া মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো কৃষককূল। বর্তমানে আখের মূল্য কেরুজ মিলগেটে প্রতি মণ ১৪০ টাকা ও ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রে ১৩৬ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে মিলগেটে ১৮০ ও ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রে ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কেরুজ মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয় ২০২০-২১ ইক্ষু রোপণ মরসুমের কার্যক্রম। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার ৩৫০ একর জমির। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমাণ ৮৫০ একর, বাকী ৮ হাজার ৫শ একর জমি কৃষকের। অথচ রোপণের শেষ অবধি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারে কাছে পৌঁছুতে পারেনি। সে বছর ইক্ষু রোপণ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে। এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমিতে ৯৮৯ একর ও বাকী ৩ হাজার ৬৩৮ একর জমির কৃষকের। যে পরিমাণ আখচাষ করা হয়েছিলো সে আখ দিয়ে ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুম ছিলো স্মরণকালে সবচেয়ে কম পরিমাণে আখ মাড়াই। ২০২১-২২ ইক্ষু রোপন মরসুমের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিলো যথা নিয়মের মতোই সেপ্টেম্বরের প্রথম দিনেই। সেবারও রোপণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার একর জমিতে। যার মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমাণ ১ হাজার ৫৮৫ একর ও বাকী ৫ হাজার ৪১৫ একর জমি কৃষকের। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত মোট ৪২৩০ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমাণ ১০৫০ ও কৃষকের জমি ৩১৮০ একর। আখ হচ্ছে চিনিকলের শ্বাস-প্রশ্বাস। সে কথা ভেবেই বাড়ানো হয়েছে যেমন আখের দাম, তেমনিভাবে সরকারের মূল্যবান এ সম্পদ রক্ষায় বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন যোগদানের পর থেকেই ইক্ষু রোপণের দিকে ঝুঁকেছেন আট-ঘাট বেধে। চাষিদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করণসহ গ্রহণ করেছেন নানা পদক্ষেপ।

Comments (0)
Add Comment