মেহেরপুর অফিস: ভালোবেসে বিয়ে করে স্ত্রীর অর্থ সম্পদ লুটে নিয়ে শ্বশুরের সম্পদ বিক্রি করে যৌতুক নিতে ব্যর্থ এক স্বামী; তার স্ত্রীকে পথে বসিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বস্ব খুইয়ে স্ত্রী অর্থলোভী স্বামীসহ তার পরিবারের ৩ জনের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে মেহেরপুর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার অভিযোগসূত্রে জানা যায়, বাদী মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মৃত এনায়েতের মেয়ে শাহানাজ খাতুন (২৫)। তার অভিযোগ ইতঃপূর্বে তার অন্যত্র বিয়ে হয়েছিলো। সেই স্বামীর ওরশে এক সন্তান জন্ম নেয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। ওই সময় দেনমোহন এবং খোরাক ও পোশাক বাবদ বাদী ওই স্বামীর নিকট হতে অনেক টাকা পান। বাদীর দাবি তিনি ওই টাকা ব্যবসায় খাঁটিয়ে অর্থশালী হন।
এরপর আমঝুপি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে রহিদুল (৩৫) বিভিন্ন সময়ে তার কাছে টাকা ধার চাইতে আসে এবং প্রেম নিবেদন করে। এক পর্যায়ে বাদী শাহানাজ খাতুন তার প্রেমে পড়ে যায় এবং চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তারা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করেন। স্বামী রহিদুল স্ত্রী শাহানাজ খাতুনকে ভুলিয়ে তিনবারে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সোনার হার, হাতের চুড়ি ও কানের দুল বিক্রি করে আরো এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বাদী শাহানাজ খাতুন আরও বলেন, এতেই তুষ্ট নয় স্বামী রহিদুল। সে তার মা সুফিয়া খাতুন (৫৫) ও পাশর্^বর্তী যুগিন্দা গ্রামের মৃত মুকার ছেলে জিয়ারুল ইসলামের (৪২) কুপরামর্শে স্ত্রী শাহানাজ খাতুনের মৃত পিতার সম্পত্তি বিক্রি করে যৌতুক বাবদ ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। যৌতুক না পেয়ে তার ওপর নির্যাতন শুরু করলে তিনি বাধ্য হয়ে ভাইয়ের বাড়ি চলে আসেন। স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন কোন খোঁজ খবর না নিলে তিনি স্বামী রহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে মামলার বিষয়ে অবগত হয়ে বিবাদীগণ বাদীর বড় ভাই মো. হাসানের বাড়িতে ওঠেন। বড়ভাই হাসান সাধ্যমত আপ্যায়ন করে তার বোনকে তাদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু মা ও অন্য বিবাদীর কথা মতো পুনরায় ৫ লাখ টাকার যৌতুক দাবি অব্যাহত রাখেন। এ সময় যৌতুক দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় বাদীকে মারধর করে এবং গলায় পা তুলে দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। এ সময় শাহানাজ খাতুনের ডাকাডাকি ও আত্মচিৎকারে লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তিনি স্বামী রহিদুল ইসলাম, তার মা সুফিয়া খাতুন ও পাশর্^বর্তী যুগিন্দা গ্রামের জিয়ারুল ইসলামকে আসামি করে আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
বাদী শাহনাজ খাতুন আরও জানান, তার স্বামী তার পূর্বানুমতি ছাড়া গোপনে মেহেরপুর সদর উপজেলার বলিয়ারপুর গ্রামের জালার মেয়ে মারিয়া খাতুনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এবং বর্তমানে শ^শুরবাড়িতে অবস্থান করছে সে।
তবে মামলার ১নং আসামি রহিদুল ইসলাম বলেন, শাহানাজ খাতুনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো সত্য। কিন্তু সে আমার পরিবারের সাথে মানিয়ে চলতে না পারায় আমি তাকে ৪ মাস আগে তালাক দিয়েছি। নগদ অর্থ লেনদেন কিংবা যৌতুক দাবি মিথ্যা। তিনি বলেন, বলিয়ারপুরে আমার দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা সত্য নয়।
এদিকে কাজীর সহযোগী বলিয়ারপুর গ্রামের মোহাম্মদ জনান, ওই গ্রামের জালার মেয়ে মারিয়ার সাথে রহিদুলের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা সঠিক।