যশোর শহরের বেশিরভাগ হোটেল, চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা পানীয় পানিতে অণুজীবের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষকের সমীক্ষায় এ ফলাফল উঠে এসেছে।
যশোর পৌরসভার বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকানে সরবারাহকৃত পানির গুণগতমান নির্ধারণে চালানো গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলগুলো Springer Publication এর Applied Water Science জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যবিপ্রবি ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষেদের ডিন এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা। সদস্য ছিলেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদিদ হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এফ কে সায়মা তানজীয়া ও যবিপ্রবি ইএসটি বিভাগের স্নাতকোক্তর শিক্ষার্থী শিরিনা আক্তার। গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক সাইবুর মোল্যা জানান, গবেষক দলটি যশোর পৌরসভার বিভিন্ন চায়ের দোকান, রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুডের দোকান, সাধারণ রেস্তোরাঁ ও সজ্জিত রেস্তোরাঁসহ মোট ৩৫টি স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পানির গুণগতমান যাচাই করে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, নমুনাগুলোর পানির অস্বচ্ছতা (টার্বিডিটি), বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, পিএইচ (Ph), মোট দ্রবীভূত দ্রবণ, নাইট্রেট, সালফেট, ফসফেটের মানসমূহ বাংলাদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত সীমার মধ্যে থাকলেও বেশ কয়েকটি নমুনায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি ছিল। এছাড়া ৪৬ শতাংশ নমুনায় লৌহের ঘনত্ব বাংলাদেশ অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বেশিরভাগ নমুনাগুলো ফিকাল কলিফর্ম (স্তন্যপায়ী প্রাণীর পেট থেকে মলমূত্রের মাধ্যমে বা মৃতদেহ পচে জলে বা মাটিতে মেশা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া) দ্বারা দূষিত হয়েছে। নমুনার মধ্যে রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুডের ও ফুচকার দোকানগুলোতে সরবরাহ করা পানি জৈবিকভাবে খুবই দূষিত। যশোর পৌরসভার খাবারের দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলোতে সরবারাহকৃত পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও হুমকিস্বরূপ।
অধ্যাপক সাইবুর মোল্যা আরও বলেন, এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যশোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত প্রশাসনকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে এ সমস্যা শুধু যশোর শহরেই নয়, এটা সমগ্র বাংলাদেশের হোটেল, চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁর খাবার পানির সমস্যা; যা সমাধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দোকান মালিকদের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।