মহাসিন আলী: সম্প্রতি সময়ে মেহেরপুরের মাঠে চাষ হচ্ছে লম্বা-মোটা ও বেগুনী রঙের সুমিষ্ট আখ। যুবক-যুবতী ও কিশোর-কিশোরী সহ সব বয়সের মানুষের কাছে এ আখের চাহিদা থাকায় এ আখ থেকে গুড় কিংবা চিনি হওয়ার সুযোগ থাকছে না। ক্ষেত থেকেই উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এ আখ। বেশি লাভ দেখে এ আখ চাষে ঝুঁকছেন এলাকার অনেক চাষি।
পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে এ জেলার কৃষকরা এ আখ চাষ করলেও সঠিকভাবে এ আখের নাম বলতে পারেন না। কেউ কেউ বলেন, এটি ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা জাত। তবে কৃষি বিভাগের দাবি এটি গে-ারি জাতের আখ। বিগত ৩-৪ সাল ধরে এ আখ অল্প অল্প চাষ হলেও জেলায় কি পরিমাণ এ আখ চাষ হচ্ছে তা কৃষি বিভাগের অজানা। তবে জেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবি ৪০ হতে ৫০ হেক্টরের মত জমিতে এ আখ চাষ হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ি গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন ও তার প্রতিবেশী বন্ধু সফিকুল ইসলাম গ্রামের রাস্তার ধারে এক বিঘা জমিতে এ গে-ারি জাতের আখ চাষ করেছেন। উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আখ কাটার সময় কার্তিক মাস। কিন্তু প্রায় এক মাস আগে থেকে বাধ্য হয়ে এ আখ কেটে দিতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যুবক-যুবতী ও কিশোর-কিশোরীদের। প্রতিটি আখ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর দুই বন্ধু বাঁশের মাঁচাতে বসে পালাক্রমে ২ মাস রাত জেগে আখক্ষেত পাহারা করেছেন। প্রতিদিন বিক্রি হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকার আখ। গত বছরে তারা ক্ষেত থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছেন। এতে প্রথম বছরে তাদের দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছে।
আখচাষি উজ্জ্বল হোসেন জানান, লাভ জনক জেনে তিনি দুই বছর আগে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার তেকালা গ্রাম থেকে অতি উচ্চমূল্যে আখ বীজ সংগ্রহ করেন। এক বিঘা জমি লিজ নিতে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শিয়ালের হাত থেকে আখ বাঁচাতে তারের নেট কিনতে হয়েছে। এছাড়া বাঁশ ক্রয় ও লেবারসহ তাদের মোট খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। কার্তিক মাস আখ চাষের উপযুক্ত সময়। পুরো এক বছর সময় লাগে আখ চাষে। প্রথম বছর আখ কাটার পর আর প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করলে আরও এক বছর আখ পাওয়া যায়। এ বছরও তারা তিন লাখ টাকার আখ বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী।
পাশর্^বর্তী ঝাউবাড়িয়া গ্রামের মুনতাজ আলী বলেন, আখ চাষে ব্যাপক লাভ হচ্ছে দেখে আমিও দেড় বিঘা জমিতে এ আখ চাষ করেছি। এভাবে সাহারবাটি, হরিরামপুর, উজুলপুর, দীঘিরপাড়া, মদনাডাঙ্গা সহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে অল্প অল্প করে এ আখ চাষ শুরু হয়েছে।
মেহেরপুর শহরের হঠাৎপাড়া থেকে টিনেজার সাব্বির, আকিব, রনি, হাসানুর, সাকিব ও আশিক বেলেগাড়ি মাঠের উজ্জ্বল হোসেনের ক্ষেতে আখ খেতে আসেন। তারা জানান, এ আখ খুব সুমিষ্ট ও নরম। তাই খেতে ভালো লাগে। আমাদের মত যুবক-যুবতী আর কিশোর-কিশোরীরা এ আখ খুবই খাচ্ছেন। দামের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, মেহেরপুরে বেশি বেশি চাষ হলে আখের দাম কমে যাবে। এখন দাম বেশি হলেও কিছু করার নেই। খেতে হবে তাই আসছি। আবারও আসবো। কোথায় কোথায় এ আখ চাষ হচ্ছে সেগুলো আমরা খুঁজে খুঁজে দেখছি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, আখের রস ও গুড় শরীরের জন্য উপকারী। এই আখ নরম ও সুমিষ্ট হওয়ায় মানুষ খুবই খাচ্ছে। আমরা এ আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এ আখ রোপণে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পরিচর্যার জন্য সেবা দিয়ে থাকি।