মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। গত এক সপ্তাহে জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
হাসপতালসূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ২২০ জনসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়াও হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত সহস্রাধিক রোগী। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন জাহানারা বেগম নামে এক নারী। তিনি বলেন, পরশু রাতে হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। প্রথম দিকে স্থানীয় ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে উপকার না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখন বমি হচ্ছে না, তবে পাতলা পায়খানা হচ্ছে।
গোপালপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বলেন, শুক্রবার সন্ধায় পাতলা টয়লেট শুরু হয়। গ্রামের ডাক্তার দেখিয়ে ওরস্যালাইন এবং ওষুধ খেয়েছিলাম। রাতে পেটের ব্যথা ও টয়লেট অতিরিক্তি হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখন পেটে ব্যথা নেই।
উজলপুর গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে স্মৃতি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে পাতলা পায়খানা ও বমি করতে থাকে। কোথাও না দেখিয়ে সরাসরি হাসপাতালে নিয়েছি। আমার মেয়ের বমি বন্ধ হয়েছে, কিন্তু টয়লেট বন্ধ হয়নি।
গাড়াডোব গ্রামের বৃদ্ধ আক্কাস আলী বলেন, আমার অন্য সমস্যা নেই, শুধু পানির মতো পাতলা টয়লেট হচ্ছে। সরকারিভাবে আমরা ওষুধ পাচ্ছি। চিকিৎসকরাও আমাদের খোঁজ নিচ্ছেন। প্রথমে পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছিল। ভর্তি হয়ে স্যালাইন দেয়ার পর কিছুটা সুস্থ মনে হচ্ছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্সদের ইনচার্জ নিপা আক্তার বলেন, এক সপ্তাহে ১৯৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৯৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। আমাদের ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবার ত্রæটি নেই।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মকলেছুর রহমান বলেন, মেহেরপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা সকলেই সুস্থ আছেন। আমরাও অতিরিক্ত প্রস্তুতি হিসেবে ডায়রিয়া ওয়ার্ড আলাদা করেছি এবং জনবল আলাদা করে দেয়া হয়েছে। তবে ভয়ের কিছু নেই। সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি বেশি যতœশীল হতে হবে। রোদে ঘোরাফেরা না করা এবং পচা-বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকলে ডায়রিয়ার প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এছাড়া ঘন ঘন পানি পান ও লেবুর শরবত পান করতে হবে।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন জওয়াহেরুল ইসলাম বলেন, আতঙ্কের কিছু নেই। আবহাওয়া পরিবর্তন হলে ডায়রিয়া কিংবা জ্বর একটু বেশি হয়। পাতলা পায়খানা ও বমি হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।