মহাসিন আলী, মেহেরপুর: শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মেহেরপুরে ডাল–কলাইয়ের রুটির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেহেরপুর শহরের শিল্পকলার মোড়, পৌরসভার সামনে ও হাসপাতাল এলাকায় বিক্রি হচ্ছে কলাইয়ের রুটি। কেউ জায়গায় বসে খেয়ে যাচ্ছে; কেউ নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি, অফিস কিংবা ক্লাবে। আবার না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছে। শীতের এ ব্যবসার মাধ্যমে কেউ কেউ প্রতিদিন পকেটে করে নিয়ে যাচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ।
মেহেরপুর শহরের হঠাৎপড়ার কেরামত আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন। তিনি একজন কলাই–রুটি মেকার। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেহেরপুর পৌরসভার সামনে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারের পাশে তাকে কলাই–রুটি বানাতে দেখা যায়। তার কলাই–রুটির দোকানের পাশে বসে কলাই–রুটি খেতে দেখা যায় ছেলেবুড়ো সব বয়সের মানুষকে। বিভিন্ন অফিস ও ক্লাবের পিয়নকে দেখা যায় অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থেকে কলাই–রুটি কিনতে।
শহরের বোসপাড়া এলাকার যাটোর্দ্ধ আব্দুর রাজ্জাক জানালেন– কনকনে এ শীতে কলাই–রুটি খেতে খুবই ভাল লাগে। বেগুন সানা, কাঁচা ঝাল সানা, ধনেপাতা সানা কিংবা ছোট মাছের শুটকি ভর্তা দিয়ে কলাই রুটি খেতে খুবই মজা। মাঝে মাঝে আলমগীর হোসেনের দোকানের পাশে বসে গরম গরম এ রুটি খাই। আবার মাঝে মাঝে বাড়িতে নিয়ে খাই।
অফিস পিয়ন তুহিন জানান– মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পরে অফিসের স্যারদের জন্য পৌর সভার সামনের দোকানগুলোতে কলাই–রুটি কিনতে যাই। বিক্রেতারা একসাথে ১৫–২০ টি কলাই–রুটি দিতে চায় না। দোকানের পাশে বসে থেকে খাওয়া লোকগুলোকে খাওয়ায়ে উঠতে পারেনা তাই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ওই রুটি পাওয়া যায়। একই রকম ভীড় লেগে থাকে পৌর সভার সামনের কলাই রুটি বিক্রেতা জিয়ার দোকান ও মর্জিনা খাতুনের দোকানেও।
শহরের মল্লিকপাড়ার কলাই–রুটি মেকার ও বিক্রেতা মর্জিনা খাতুন জানান, তিনি শীতের শুরু থেকে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মল্লিকপাড়ার নিজের একটি দোকানে কলা–রুটি বানিয়ে থাকেন। সেখানে কম–বেশী বেচা–কেনা হয়। তারপরও এ শীতে এ পিঠার ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধিতে তিনি পৌরসভার সামনের এলাকায় বসেন এবং এ রুটি বানিয়ে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এতে তার ভাল লাভ হচ্ছে।
আলমগীর হোসেন জানান, তার বয়স প্রায় ৩২ বছর। এ বয়সে এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক তিনি। সংসার চালাতে হয় মা–বাবা ও শ^াশুড়ি সহ ৮ জন লোকের। ২০২০ সালে বড় মেয়ে আয়েশা ৮ম, ছোট মেয়ে মেঘলা ৪র্থ ও একমাত্র ছেলে সোহাগ প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। ২০২১ সালে তারা পরবর্তী শ্রেণিতে উঠবে। তিনি বিগত ৪ বছর ধরে কলাই রুটি বানিয়ে বিক্রি করেন। কলাই–রুটির ব্যবসা তিনি শীতের ৩–৪ মাস করে থাকেন। এতে তার পুঁজি মাত্র দুই হাজার টাকা। অল্প সময়ের এ রুটি ব্যবসায় প্রতি রাতে তিনি এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করে থাকেন। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মের সময় তিনি দিনের বেলায় একই স্থানে বসে লেবু–চিনির ঠান্ডা শরবত বানিয়ে বিক্রি করেন।
মেহেরপুরের উপশহর যাদবপুরের রামিজ আহসান বলেন, শীত এলেই কলাই–রুটি খাওয়া হয়। কিন্তু একেবারে রাস্তার ওপরে এ রুটি তৈরি এবং রাস্তার পাশে বসে খাওয়া স্বাস্থ্য সম্মত নয়। গাড়ি–ঘোড়ার চলাচলে সর্বদা ধূলা–ময়লা উড়ছে। এর মধ্যে কলাই–রুটি তৈরি ও খোলা জায়গায় বসে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।