স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবারও ২১ জন বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে ব্যাংক কর্মকর্তার যমজ দু’কন্যা মেডিকেল চান্স পেয়ে চমক সৃষ্টি করেছে। এরা হলেন মাহমুদা তারিন ও ফাহমিদা তাজিন। দু’বোন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ পাড়ার ব্যাংকার নাছির উদ্দীন মিঠু ও গৃহিণী নাজমুন্নাহার মুন্নির যমজ কন্যা। তবে যমজ দু’বােন এমবিবিএস অধ্যয়নের জন্য একই কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করতে পারেনি। তারিন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ও তাজিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। দু’বোনই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাসসহ বৃত্তি পেয়েছিলো।
এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে। যমজ দু’বােনের পিতা নাছির উদ্দীন মিঠু ইসলামী ব্যাংক, চুয়াডাঙ্গা শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। মা গৃহিণী। একান্ত আলাপচারিতায় তারিন ও তাজিম বলেন, আমরা দু’বোন এক সাথে ঘুমোই, পড়াশোনাও করি একই সাথে। আবার খুনসুটিও করতাম এক সাথেই। পড়া নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চললেও কোনো কিছু বুঝতে না পারলে দু’জন একে অপরকে সহযোগিতা করতাম। আমরা দিনের চেয়ে রাতেই বেশি পড়ালেখা করতাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পড়ালেখার কাজে ১৬ ঘণ্টা ব্যয় করলেও একাগ্রচিত্তে পড়ালেখা হতো ৮ ঘণ্টার মতো। নিজেদের পড়ালেখার পাশাপাশি মায়ের ঘরের কাজ ও রান্নার কাজে সহযোগিতা করতাম দু’বোন এক সাথে। মা সেটি করতে না দিতে চাইলেও আমরা এক প্রকার জোর করেই করতাম। আমাদের কাপড়-চোপড় আমরা অধিকাংশ সময় নিজেরাই পরিষ্কার করতাম। বাবা ব্যাংকার হওয়ায় দিনের বেলায় বাবার সাথে আমাদের দেখা খুব কম সময় হতো। রাতে খাবার টেবিলে বাবার সাথে দেখা হতো বেশি। তবে যতো রাতেই বাবা বাসায় ফিরতো না কেন? আমাদের পড়ালেখার খোঁজ-খবর নিতো। কিছু লাগবে কি-না তা জিজ্ঞাসা করতো। এটা ছিল বাবার রুটিন বাধা কাজ। মাঝে মাঝেই আমাদের জন্য ফল ও আইসক্রিম এনে গোপনে পড়ার টেবিলের পাশে রেখে দিতো। কিন্ত মা এটি পছন্দ করতো না। মা বলতো আইসক্রিম ঠা-া, এতো খেতে নেই, গলা ব্যথা করবে।
তারিন বলেন, মায়ের কারণে আমরা মাঝে মাঝে একটু আগে-ভাগেই -ুমিয়ে পড়তাম। কারণ আমরা যতোক্ষণ জেগে থাকতাম, ততক্ষণ মা রাত জেগে থাকতো। মাকে বললেও শুনতে চাইতো না। আবার কোনো কোনোদিন দু’বোন মিলে মাকে জোর করে বেডে শুইয়ে দিতাম। কিন্তু ঘুমোনোর ভান করলেও মা ঘুমোতো না। তাই ইদানিং সকাল সকালই আমরা ঘুমোতে যেতাম।
তাজিন বলেন, এইচএসসি পাস করার পর মেডিকেল কোচিংয়ের জন্য ঢাকাতে যাওয়ার পর খুব খারাপ লাগতো। ঢাকাতে রেটিনা কোচিং সেন্টারে আমরা মেডিকেল কোচিং করতাম। তবে মায়ের সেইরাত জাগা আরো বেড়ে গিয়েছিল। ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর মা ঘুমোতে যেতো। শেষ পর্যন্ত বাবা ঢাকাতে আমাদের কাছে মা কে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।
কতো ঘণ্টা পড়লে মেডিকেলে চান্স পাওয়া যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তাজিন বলেন, প্রথমতো আল্লাহর রহমত, দ্বিতীয়ত নিজের পরিশ্রম। তবে মনোযোগ সহকারে ২৪ ঘণ্টায় ১০ ঘণ্টা পড়ালেখাই যথেষ্ট।
তারিন ও তাজিনের সখ কি ছিলো ও পড়ার রুটিন কি ছিলো? এমন প্রশ্নের জবাবে ওদের মা নাজমুন্নাহার মুন্নি বলেন, দু’বোনের সখ ছিলো নিজ হাতে চা-কফি ও নুডুলস বানিয়ে খাওয়া, সময় পেলে ইংলিশ মুভি দেখা এবং ছুটির দিনে ঘুমপাড়তো দু’বোন পাল্লা দিয়ে। ওদের বাবা রাত ১১টার বেশি পড়তে নিষেধ করতো। বলতো ফজরের নামাজের আগে জেগে পড়তে, আবার ফজরের নামাজ পড়ে সকাল পর্যন্ত পড়তে বলতো। কিভাবে পড়া লেখা করলে মেডিকেল চান্স পাওয়া সহজ হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারিন বলেন, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার থেকেই পড়ালেখাটি ভালো করে শুরু করতে হবে। সেই সাথে বেশি বেশি ইংরেজি বিষয়টি পড়তে হবে ও বিভিন্ন শিক্ষামূলক ইংরেজি মুভি ও ইংলিশ ম্যাগাজিন পড়তে হবে।
স্কুল ও কলেজ জীবনে কোন কোন কোচিংয়ে পড়ছো? এমন প্রশ্নের জবাবে তারিন বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে আমি কোনো কোচিংয়ে পড়েনি। কবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট পড়েছি। বুঝতে সমস্যা না হলে বাইরে পড়ার চেয়ে বাড়িতেই পড়ালেখায় বেশি সময় দিতাম।
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে দু’বোনই সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন তাদের বাবা-মায়ের জন্য। তারা বলেন, আমরা ডাক্তার হয়ে যেন দরিদ্র, পীড়িত ও মানবতার সেবা করতে চাই। আমাদের দু’বোনের জন্য সকলে দোয়া করবেন।