শরিফুল ইসলাম রোকন: মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার আট দিন পর পরিবারের নিকট ফিরে গেলো শিশু আশরাফুল। পুলিশ ও এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় মায়ের কোল ফিরে পেয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন শিশুটির পরিবার। গত ৩০ মার্চ গভীর রাতে আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকায় এক শিশুকে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলে সে নিজের নাম আশরাফুল এবং বাবা-মায়ের নাম বলতে পারলেও বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি। পরে এলাকাবাসী বিষয়টি আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে অবহিত করে এবং রাতেই শিশুটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ শিশুটিকে সুরক্ষিতভাবে থানায় রেখে তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের পাশাপাশি তারা আশপাশের থানায় খোঁজ নিতে থাকে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া খাজানগরের সাগর সর্দ্দার ও আক্তারা খাতুন দম্পত্তির ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৭)। সে গত ২৮ মার্চ বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে কুষ্টিয়া সদর থানায় জিডি করা হয়। ৩০ তারিখ রাতে আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়ানোর সময় এলাকাবাসী একটি শিশুকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রাতেই আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ও সাম্প্রতিকী ডট কম পত্রিকার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে শিশুটির ভিডিও দেয়ার জন্য বলেন। রাতেই একটি মিডিয়াসহ বেশ কয়েকটি মিডিয়ার শিশুটির ভিডিও ছাড়া হয়। রাতে শিশুটিকে খাবার খাওয়ানোর পর থানাতেই রেখে দেয়া হয়। পরদিন সকালে শিশুটির পিতা-মাতার সন্ধান না পাওয়ায় আলমডাঙ্গা থানার নারী শিশু হেল্প ডেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এএসআই শিউলি খাতুনকে শিশুটির দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঈদুল ফিতরের টানা ছুটির পর সকল অফিস আদালত খুলেছে। ৮ দিনেও শিশুটির পিতা মাতার সন্ধান না পাওয়ায় তাকে আদালতের মাধ্যমে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের শিশু পরিবারের পাঠানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গতকাল রোববার আদালতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে কুষ্টিয়া সদর থানা থেকে একটি কল আসে এবং জানায় শিশুটির পিতা-মাতার সন্ধান পাওয়া গেছে।
অবশেষে গতকাল রোববার দুপুরে শিশুটির মা আক্তারা খাতুন ও বাবা সাগর সর্দ্দার আলমডাঙ্গা থানায় এসে তাদের সন্তানকে শনাক্ত করেন। পুলিশ প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে শিশুটিকে তার পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করে। শিশু আশরাফুলকে ফিরে পেয়ে তার মা-বাবা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা পুলিশ এবং এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা সবসময় মানুষের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।