স্টাফ রিপোর্টার: আইনি প্রক্রিয়া মেনেই চার বছর আগে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। উচ্চ আদালতের আপিলের রায়, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের মৃত্যু পরোয়ানা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে সেই তথ্যই মিলেছে। নথি যাচাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত আপিল আবেদনের নম্বরের সঙ্গে ফাঁসি কার্যকর সংক্রান্ত নথিতে থাকা আপিল আবেদনের নম্বরে মিল নেই। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর কারাগারে চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যা মামলায় দুই আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা আবদুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয়। এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির দাবি করেছেন, আপিল (নং-১১১/২০১৩ ও ১০৭/২০১৩) এখনো শুনানি হয়নি। বুধবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল। আপিল শুনানির আগেই দুই আসামির মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে।
এদিকে ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন একটি অফিস নোট তৈরি করেন। সেই অফিস নোটে তিনি উল্লেখ করেন, মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত বন্দি ঝড়ু ও মোকিম ওই রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে (জেল আলিল নং- ০৩/২০১৬) লিভ টু আপিল (নং-২৩/২০১৩) দায়ের করলে আদালত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর প্রদত্ত রায়েও ওই দুইজনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্রিমিনাল আপিল ও জেল পিটিশন খারিজ হওয়ায় দ- প্রদানকারী চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ ওই মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক পৃথক মৃত্যুদ- কার্যকরের পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট অব এক্সিকিউটিব) ইস্যু করেন।
এ প্রসঙ্গে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘ওই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর সংক্রান্ত যাবতীয় নথি যাচাই করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, আইনি প্রক্রিয়া মেনেই রায় কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।’
এদিকে ফাঁসির রায় কার্যকর সংক্রান্ত নথি যাচাইকারী এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত বকুল ম-লের মেজো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আবদুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে গোলাম রসুল ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদ-াদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা জানান, মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিলে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত ২ জন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দ-াদেশ মওকুফ করা হয়। উচ্চ আদালতে মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদ-াদেশের রায় বহাল থাকে। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্ট তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়।
‘এরপর উচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল সংক্রান্ত নথি নিম্ন আদালতে (চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত) পাঠিয়ে দেন। পরে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে ওই দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। কারা কর্তৃপক্ষ মৃত্যু পরোয়ানার বিষয়ে দুই আসামিকে অবহিত করেন। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন।’
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, নিয়মানুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ প্রাণভিক্ষার আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠায়। পরবর্তীতে প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর সংক্রান্ত চিঠি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত বকুল ম-লের মেঝো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আবদুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদ-াদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এই রায় ঘোষণা করেন।