স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানের অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ তার কর্মকালীন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব চত্বরে ওই মানববন্ধনে সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অংশ নিয়ে দাবি দাওয়ার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্যে বলেন, দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জনকে আবিলম্বে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা না হলে রাজনৈতিক সামাজিকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবী সংগঠনকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান কচি, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গরীব রুহানী মাসুম, অরিন্দম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও তথা পরিবেশ আন্দোলন নেতা সাবেক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগে ডা. এএসএম মারুফ হাসান সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা সেবার মানও নি¤œমুখি হয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত হয়েছে পরিবেশ। নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ল্যাব স্থাপন করার সুযোগ দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে। এছাড়া সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ ও মালামাল ক্রয়-সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। এই সিভিল সার্জন দায়িত্বগ্রহণের পর এ জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ এই সিভিল সার্জনের প্রত্যাহার দাবি করছি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিক সমাজ সবসময়ই সুন্দর সমাজ গঠনে দায়িত্বপালন করে আসছে। সাংবাদিকদের চোখের সামনে সিভিল সার্জনের চরম স্বেচ্ছাচরিতা ও অনিয়ম ধরা পড়েছে বলেই রাজপথে নেমে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধিসহ দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা রোধ করতে না পারলে চুয়াডাঙ্গাবাসীরই ক্ষতি। এ ক্ষতি রুখতে চুয়াডাঙ্গার সর্বস্তরের মানুষের একত্বতা ঘোষণা করে দাবি দাওয়া আদায়ে আন্তরিক হওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্মারকলিপি পেয়ে আন্তরিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের বিশ^াস রয়েছে। জনস্বার্থেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
মানববন্ধনে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি স্মারকলিপি পাঠ করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, করোনাকালীন সময়ে ওষুধপথ্য কেনা, করোনার দায়িত্বপালনকারী ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের অনুকুলে বরাদ্দ প্রণোদনাসহ আর্থিক সুবিধাদির অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন। প্রভাবশালী ডাক্তাররা চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের পাওনা আদায় করলেও বেশিরভাগই নিরবে অত্যাচার সহ্য করে আসছেন। স্মারকলিপিতে পেশকৃত ৫ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে অভিযুক্ত সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানকে প্রত্যাহার ও তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। ২. চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে অবিলম্বে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ। ৩. জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল অফিসারের (ইএমও) পদ সৃষ্টি ও হাসপাতালের শূন্য পদে অবিলম্বে চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা। ৪. হাসপাতালের পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা। ৫. দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর পেশ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, পেশকৃত স্মারকলিপি দ্রুত মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে।