দামুড়হুদায় পৃথক বাল্যবিয়ের আয়োজনে জরিমানা, পুলিশের নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলার পৃথক দুটি গ্রামে বাল্যবিয়ে দেয়া ও আয়োজন করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে পৃথক পৃথকভাবে দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকসানা মিতা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাল্যবিয়ের আয়োজনে উপস্থিত হয় দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় স্থানীয় নামসর্বস্ব এক নেতা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বর-কনের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের অর্থ। বিষয়টি রাতের আঁধারের মতো অন্ধকার থাকলেও সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বর ও কনের পিতাকে জরিমানা করার পর বিষয়টি কাঁচের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত পরশু বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামে একটি বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখানে উপস্থিত হন দামুড়হুদা মডেল থানার একটি টহলদল। বিষয়টি ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্থানীয় নামসর্বস্ব এক নেতা মুছা করিম। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বর, কনের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের অর্থ। অন্ধকারের ঘটনা অন্ধকারেই রয়ে যায়। বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলে বরপক্ষ নবধূকে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার বিষয়টি জানতে পারে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকসানা মিতা উপস্থিত হন কনের বাড়িতে। হাজির করা হয় বর-কনের অভিভাবকদের। এ সময় বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে অকপটে স্বীকারও করে বর-কনের অভিভাবকরা। তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন আদালতের বিচারক দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকসানা মিতা। এ সময় বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭সালের ৮ধারায় নাবালিকা মেয়ের পিতা ও বরের পিতাকে অভিযুক্ত করে ভ্রাম্যমাণ আদালত উভয়কে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। অভিযুক্তরা জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলে মুচলেকা নিয়ে অভিযুক্তদেরকে মুক্তি দেন। একই দিনে, বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামের এক নাবালিকা মেয়ের বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকসানা মিতা। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নাবালিকা মেয়ের পিতাকে অভিযুক্ত করে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭সালের ৮ধারায় ২০হাজার টাকা জরিমানা করেন। অভিযুক্ত জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে এবং আদালতে মুচলেখা দিয়ে মুক্তি পাই। পৃথক দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহায়তা করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাজির শাখাওয়াত হোসেন, দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের একটি চৌকস দল। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়ে কনের ভাই সাব্বির বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসে হাজির হন। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমাদের কাছে টাকা চাওয়া হয়। আমি মেয়ের পক্ষ থেকে ৫হাজার টাকা ও বরের পক্ষ থেকে বরের মা সাড়ে ৫হাজার টাকা দেয় মুছা করিমের হাতে। তারপর পুলিশ চলে যায়। দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে মুছা করিম নামে এক ব্যক্তি কিছু টাকা নিয়েছে বলে (ইউএনও) স্যারের মাধ্যমে জানতে পারি। তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত কে থানায় নেয়া হয়। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে যাদের থেকে টাকা নিয়েছিলো ফেরত দেবে মর্মে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকসানা মিতা বলেন, বাল্যবিয়ে সম্পাদনের অভিযোগ ও আয়োজনের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে দুটি বাল্যবিয়ে প- করে জরিমানা করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছে যেন তারা ভবিষ্যতে আর বাল্যবিয়ের আয়োজন না করেন। এছাড়াও বাল্যবিয়ের কুফল তুলে ধরে তাদেরকে সচেতন করা হয়।

Comments (0)
Add Comment